নিজস্ব সংবাদাতা, কলকাতা
Globalnewz.online
7th August’23, Monday
বাংলা মাধ্যম এবং ইংরেজি মাধ্যম- উভয়ের মধ্যে বৈষম্য বন্ধ হোক
প্রথমে সৌরনীলের আত্মার শান্তি কামনা করি!পুলিশের গাফিলতির জন্য বেহালায় স্কুলের সামনেই যেভাবে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটলো সত্যিই তা খুব দুঃখজনক এবং বেদনাদায়ক।পুলিশের এই গাফিলতির জন্য ধিক্কার জানাই।সম্প্রতি সময়ে আমাদের রাজ্যে দেখা যাচ্ছে, ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল ও ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে বাংলা মাধ্যমের স্কুল ও ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে চরম একটি সামাজিক ও নীতিগত বৈষম্য।পাশ্চাত্যায়ন এর প্রভাবে আমরা এতটাই পশ্চিমী সংস্কৃতির দাস হয়েগেছি যে, ইংরেজি ভাষার প্রতি বেশি গুরুত্ব দিতে গিয়ে নিজেদের গর্বের বাংলা ভাষাকে ক্রমে ক্রমে গুরুত্বহীন করে তুলেছি।আমাদের মনে রাখতে হবে বাংলা ভাষার মত ইংরেজিও কেবল একটি ভাষা তাছাড়া আর কিছুই নয়।তাহলে কেন এই বৈষম্য?বাংলা মাধ্যমের স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বেশিরভাগ সময় নানান ভাবে সমাজে কটুকথা শুনতে হয়,নানান অপমান ও লাঞ্ছনা সহ্য করতে হয়।এর জন্য সহস্র ছেলে-মেয়ে লজ্জায় পড়াশোনাও ছেড়ে দিয়েছে।এমনকি শিক্ষা থেকে শুরু করে ইন্টারভিউ এবং চাকরি ক্ষেত্রেও বাংলা মাধ্যম শুনলেই বা বাংলা ভাষায় কথা বললে তাকে নিম্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হয়,তাকে নানানভাবে অবহেলা করা হয়।আর অন্যদিকে, ইংরেজি ভাষায় বা ইংরেজি মাধ্যম এর ছাত্র-ছাত্রী হলে তাকে উচ্চ দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হয়। এর জন্য বাংলায় থেকেও নিজের মাতৃভাষা বাংলাতে কথা বলতে ছাত্র-ছাত্রীদের সংকোচবোধ করতে হয়।অনেকসময় দেখা গেছে, ইংরেজি মাধ্যম নাহলে চাকরি এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য আবেদনও করা যায়না।বাংলা ভাষা তথা বাংলা মাধ্যমের প্রতি এইরকম বৈষম্য করা একেবারেই অনুচিত।যেখানে আজকেরদিনে বাংলা ভাষা নিয়ে বিদেশেও চর্চা হচ্ছে সেখানে নিজের ভূমিতেই বাংলা ভাষা তথা বাংলা মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলি আজ অবহেলায় ভুগছে এবং বিলুপ্তির পথে।বেহালায় যে ঘটনাটি ঘটলো সত্যি খুব নিন্দনীয় ও লজ্জাজনক।পুলিশ ইংরেজি মাধ্যম স্কুল গুলোর সামনে যেভাবে পুলিশি তৎপরতা দেখায় তা বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলোর সামনে তার ছিটেফোঁটাও দেখায় না- এই বৈষম্য কেন? সরকারকেও এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।কেবল সৌরনীল নয়,সৌরনীল এর মত অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী এই রকম বৈষম্য মূলক পরিস্থিতির শিকার।সরকারকে এই বিষয় গুলোকে গুরুত্বের সহিত দেখতে হবে এবং পর্যালোচনা করতে হবে।কেন বাংলা মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোকে এবং ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সবসময় অপমান হতে হবে?কেনো সর্বদা তাদেরকে অবহেলায় ভুগতে হবে? আমরা কি তবে ইংরেজদের তাড়িয়ে নিজেরাই আবার ইংরেজ সাজচ্ছি।আমি ইংরেজি ভাষার বিরোধিতা করছিনা;কিন্তু তাবলে ইংরেজি ভাষার জন্য বাংলা ভাষা তার নিজ ভুমিতেই নিজের ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলবে তা মেনে নেওয়া যায়না।তাই সরকারিভাবে বাংলা মাধ্যম এর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোকে আর্থ-সামাজিক ও পরিকাঠামোগতভাবে উন্নীত করতে হবে এবং ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি কোনরূপ যাতে বৈষম্য নাহয় সেই দিকটিও আইনিভাবে গুরুত্ব দিতেহবে।সবাইকে বলছি বাংলা মাধ্যম এবং বাংলা ভাষাকে অবহেলা করা বন্ধ করুন। তাই সরকারিভাবে, আইন করে বাংলা মাধ্যম এবং ইংরেজি মাধ্যম- উভয়ের মধ্যে বৈষম্য বন্ধ করা হোক।
(লেখক তরুণ কবি, প্রাবন্ধিক, সমাজকর্মী, সমাজতত্ত্বের গেস্ট লেকচারার এবং সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক)
আসামের বাঙালিরা, মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করলেও, উচ্চ মাধ্যমিক থেকে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করেন। এতে সুবিধা ~ একজন ছাত্র -ছাত্রী দুটি ভাষার ওপর সমান দখলদারি হতে পারেন।
পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা, তাই করলে পারেন। অন্যথায়, বাংলার পাশাপাশি
ইংরাজী ভাষাকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে। ব্রিটিশ মুখের বাঙালিরা যদি, বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষার ওপর সমান দক্ষতা অর্জন করতে পারেন, তবে এ যুগের বাঙালিরা কেন পারবে না? ইংরাজী ভাষায় কথা বলা বা কিছু লেখা ~ এমন কোন কঠিন বলে, আমার কখনো মনে হয় না। তবে, সাহিত্য রচনার ব্যাপারটা আলাদা।
ইংরাজী ভালো করে শিখতেই হবে উচ্চ শিক্ষার জন্য এবং চাকরির জন্য।এর বিকল্প পথ তৈরি হয় নি।যদি, তামিল, মালায়ালামরা নিজেদের ভাষা ছাড়াও ইংরাজী ভাষা ভালো করে রপ্ত করে সব সুবিধা নিতে পারেন, তাহলে, বাঙালিরাও পারবেন।
ছোটরা, বাংলা ভাষার মত ইংরাজী ভাষাকেও ভালোভাবে অধ্যায়ন কর। এতে লাভ হবে বৈকি! বাস্তব সত্যকে মেনে নিতে হবে।অযথা, ভাবাবেগ নিয়ে পড়ে থাকলে, দিন দিন পিছিয়ে যাবে।