নিজস্ব সংবাদাতা, কলকাতা,
Globalnewz.online
7th August’23, Monday
জেনারেল কলেজে স্নাতক স্তরে ভর্তির ক্ষেত্রে পড়ুয়াদের অনীহা
বর্তমানে সারা রাজ্য ব্যাপী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত সমস্ত কলেজ গুলোতে ভর্তির প্রক্রিয়া চলছে।এই বছর চালু হয়েছে নতুন জাতীয় শিক্ষানীতির নিয়মানুযায়ী ৪ বছরের ডিগ্রি কোর্স।উচ্চ মাধ্যমিক এর পর অভিভাবক সহ ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের নিজেদের ক্যারিয়ার গড়ার জন্য কোন বিষয় নিয়ে পড়বে বা কোন লাইনে(জেনারেল, ম্যানেজমেন্ট, মেডিক্যাল,ইঞ্জিনিয়ারিং এবং আইন প্রভৃতি) পড়লে চাকরির ক্ষেত্রে সুবিধা হবে সেই নিয়ে খুব চিন্তিত।এখন সমস্ত কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়া,কাউন্সেলিং এবং তালিকা প্রকাশ প্রভৃতির ক্রিয়াকলাপ গুলো চলছে। খবর সূত্রে জানা গেছে, জেনারেল ডিগ্রি কোর্সের কলেজ গুলোতে এই বছর ভর্তির সংখ্যা খুবই কম।এখনো প্রায় ৫০ শতাংশ আসন খালি রয়েছে।কোনো কোনো কলেজে অনার্সের আসন খালি আবার কোনো কোনো কলেজে পাস কোর্সের আসন এখনো অর্ধেক খালি।তাই একাধিকবার কলেজের ভর্তির হওয়ার সময়সীমা বাড়াতে হচ্ছে এবং কাউন্সেলিং সহ একাধিকবার তালিকা প্রকাশও করতে হচ্ছে।দেখা গেছে, ছাত্র-ছাত্রীদের জেনারেল কলেজে পড়ার আগ্রহ দিন দিন কমে যাচ্ছে।এই নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সহ কলেজ কর্তৃপক্ষ খুবই উদ্বিগ্ন।এর কারণ হিসাবে বলা যেতে পারে, বর্তমানে সময়ে দেখাগেছে চাকরির বাজার খুবই মন্দা।বেকারত্ব এর পরিমাণ দিন দিন যেনো বৃদ্ধি পেয়ে যাচ্ছে।প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল,কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে সেইভাবে কোনো চাকরির পরীক্ষা ও নিয়োগ হয়নি।এছাড়াও অন্যান্য চাকরির পরীক্ষাও সেভাবে হয়নি, যদিও কিছু কিছু চাকরির পরীক্ষা হচ্ছে তাতেও দেখা যাচ্ছে দুর্নীতি এবং আইনি জটিলতা।এর ফলে দীর্ঘদিন ধরে কোনো নিয়োগ প্রক্রিয়া সফল হয়নি।দিন দিন বাড়ছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা।চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ এর পর থেকে নিয়োগ অবধি সময়ও লাগছে দীর্ঘদিন।এদিকে জেনারেল ডিগ্রি কোর্সে একজন ছাত্র-ছাত্রীকে B.A./B.Sc/M.A./M.Sc/B.Ed/M.Ed/M.phil/NET অথবা SET/Ph.D এত কিছু ডিগ্রি অর্জন করতে হয় এবং পরীক্ষা দিতে হয়।এরপরও সেইভাবে কোনো চাকরি পাওয়া যায়না।এমনকি গ্রুপ-ডি এর কাজেও আবেদন করতে দেখা গেছে উচ্চ শিক্ষিতদের।তাও সেই চাকরিও ঠিক মতো পাওয়া যায়না।এখন জেনারেল ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে চাকরি পাওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ এবং দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।চাকরির নিয়োগের জন্য শিক্ষিত বেকারদের রাস্তায় রাস্তায় আন্দোলন করতে হচ্ছে, অনেকে আবার মানসিক হতাশায় ভুগছে এবং আত্মহত্যাও পর্যন্ত করছে।এসবের ফলশ্রুতি হিসেবে তরুণ পড়ুয়াদের মনে জেনারেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রি কোর্সে ভর্তি হওয়ার প্রতি এক নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হচ্ছে।অন্যদিকে অন্যান্য প্রফেশনাল লাইন নিয়ে পড়াশোনা করলে কিছু না হোক পড়াশোনার শেষে বেসরকারিভাবে হলেও ক্যাম্পাসিং এর চাকরি পাওয়া যাচ্ছে এবং সরকারি ক্ষেত্রে চাকরি পেতে জেনারেল লাইনের থেকে কিছুটা হলেও সুবিধা রয়েছে।তাই জেনারেল কলেজে ডিগ্রি কোর্সে ভর্তির ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদের আগ্রহ বৃদ্ধি করতে হলে প্রথমে যে বিষয় গুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে তাহল- বেকারত্ব এর সমস্যার সমাধান করা,চাকরির পরীক্ষা এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া গুলোকে দুর্নীতি মুক্ত ও দ্রুতভাবে করতে হবে,প্রতিবছর যাতে সরকারি ও বেসরকারিভাবে কর্মসংস্থান করা যায় সেই দিক গুলোর প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে,এর পাশাপাশি চাকরি নিয়োগের শর্তাবলী গুলোকে সরলীকরণ করতে হবে,অন্যান্য প্রফেশনাল লাইনের মতো জেনারেল কলেজের ডিগ্রি কোর্সের ক্ষেত্রে পড়াশোনার শেষে কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে বেসরকারিভাবে হলেও ক্যাম্পাসিং এর সুবিধা রাখতে হবে,যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি ও সম্মানজনক বেতন প্রদান করতে হবে,পড়াশোনা এবং চাকরি তথা ক্যারিয়ার নিয়ে গ্রামের প্রান্তিক ছেলে-মেয়েদের মধ্যে অঞ্চল ভিত্তিক ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং এর ক্যাম্প করতে হবে, ভালো রেজাল্ট এর উপর ভিত্তি করে ছাত্র-ছাত্রীদের বিভিন্ন ধরণের স্কলারশিপ প্রদান করতে হবে এবং উৎসাহ দেওয়ার জন্য বিভিন্ন পুরস্কারও প্রদান করতে হবে, মাতৃ ভাষায় শিক্ষা প্রদানের ব্যাবস্থা করতে হবে প্রভৃতি।এই উদ্যোগ গুলোকে রাজ্য এবং কেন্দ্র উভয় সরকারকেই গ্রহণ করতে হবে।এই উদ্যোগ গুলো গ্রহণ করলে আমার মনেহয় জেনারেল কলেজ গুলোতে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার আগ্রহ কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পাবে।
●(লেখক তরুণ কবি,প্রাবন্ধিক, সমাজকর্মী, মেডিক্যাল কলেজের সমাজতত্ত্বের লেকচারার এবং সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক)