প্রিয়াঙ্কা কর্মকারের “পিহু” কাব্যগ্রন্থ এক ভালো কাজ
——————————————-
ঋদেনদিক মিত্রো ( কলকাতা )
“সময়ের চাষ করবো।
জন্মের সীমাকে বাঁধি স্বীকারের খুঁটিতে,
বীজের সংরক্ষণ চলে নিয়তির ঘরে
তবু, বসে বুনি সময়ের মুখশ্রী,
চলে যাবো সেই দিকশূন্য পুরে।”
“সময়ের বীজ” কবিতায় এই রকম পংক্তির আলেখ্য দিয়ে কবি প্রয়াঙ্কার “পিহু” কাব্যগ্রন্থের পথ চলা। প্রথম থেকেই একটা লম্বা দার্শনিকতায় পাঠককে মসৃন চিত্রকল্প দিয়ে ছেড়ে দিলেন।
একটু-একটু করে এখান সেখান থেকে তুলে আনছি।
“বুক-মার্ক” কবিতায় বলেছেন :–
ব্যাস্ততার বুক-মার্ক,
নাকি ব্যাক্তিত্ব।
“পুরুষ প্রেমিক” কবিতায় :–
সিগারেটের ধূসর ধোঁয়ায় মিশেছ প্রতিদিন।
“ফেরা যাক” কবিতায় :–
ফেরা যাক
অতীতের সজাগ সতর্ক সৃষ্টির মূহুর্তে।
“ইচ্ছে অলীক” কবিতায় :–
তুমি সকাল বিকেল হবে আমার।
“পথ-পাঁক’ কবিতায় :–
সময়ের বাথরুমে নাগরিকত্ব দিয়ে
স্নান করার চেয়ে
মূল্যবোধ দিয়ে মুখ ধোয়া অনেক ভালো।
“ধংসাবশেষ’ কবিতায় :–
সভ্যতার দেওয়ালে ফ্রেম করে টাঙানো আছে এক একটা রিপু।
আরো বেশ কিছু কবিতা আছে সম কদরের। আবার কিছু কবিতা আছে এই কবির অধিকারের ক্ষেত্রে জলো লাগছে।
“দাগ’ কবিতায় :–
“ঐ মেয়ে
তোমার রক্তে কি কেনো
জাতের গন্ধ পেয়েছল তারা!”
নারীর প্রতি নানা অমানবিক ঘটনার প্রতিধ্বনি এই কবিতায় থাকলেও কবিতার স্তরে ইনার হাতের ক্ষেত্রে বেমানান। এতে অজান্তে মিশেছে কবি জয় গোস্বামীর রেখা।
“গভীরতা” কবিতায় :–
“কোলাহলের শহরে একমুঠো বিষন্নতা খুব দরকার। ”
এই পংক্তিতে আছে কবি সমর সেন ও জীবনানন্দ দাশের মিশ্রিয় আবহাওয়া।
“শব” কবিতায় :–
“অতিদূর কোনো এক অপরিচিত শব
নক্ষত্র রাতের গদ্যস্ফুর্তি,”
এটাও জীবনানন্দ দাশের আঘান। এগুলি উল্লেখ করে কবিকে সতর্ক করলাম। আরো দু-চারটি মাত্র এই রকম আছে। কবি বুঝতে পারবেন।
কিন্তু, সামগ্রিক বিচারে প্রিয়াঙ্কা একজন স্থিতধী কবি। এই নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারে, আমি বিশ্বাস করি না।
বইটি কিনে ঘরে রাখবার মতো।
আকাডেমি, জ্ঞানপীঠ পুরস্কার পাওয়া বইতেও অনেক কবিতা উপযোগী থাকে না। কিন্তু সেই উদাহারন নিয়ে আমরা কোনো দুর্বল কবিতা বা সাহিত্যকে ক্ষমা করতে পারিনা। বরং এই কবিকে জানিয়ে দিতে চাই, সামান্য যে কয়টি কবিতা আরো পাকা হতে পারতো, সেগুলি রেখে-রেখে দেখলে অনেক বদলাতো। এই অভিজ্ঞতা কবিকে আরো সতর্ক করবে।
আসলে জ্ঞানে ও চর্চায় তিনি বহুমুখী, তাই তাঁর কাছ থেকে সব সময় কাজের পরিশীলন আশা করব, প্রতি কাজে।
তবুও এই কাব্যগ্রন্থে অনেক কবিতা উচ্চ মানের হওয়ায় বইটি কিনে রাখার মতো।
প্রিয়াঙ্কা যেমন কবি, একই সাথে গবেষিকা ও আবৃত্তি শিল্পী ও নৃত্যশিল্পী।
সমালোচনার জন্য হাতে পেয়েছিলাম প্রিয়াঙ্কা কর্মকারের “পিহু” কাব্যগ্রন্থ। ৬২ কবিতা নিয়ে ৮০ পৃষ্ঠার বই। পুস্তকে থাকা তথ্য অনুযায়ী পিতা কবি দীলিপ কর্মকার, মাতা শ্রীমতী ইলা কর্মকার। খুব ছোটবেলা থেকেই প্রিয়াঙ্কা কবিতা লিখতেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে রবীন্দ্র কবিতা ও নাটকের উপরে পাঠ্য নিচ্ছেন। এম-ফিল করেছেন। কিন্তু মূল লক্ষ্য সৃষ্টিশীলতায় পথ চলা। অধ্যাপনা বা শিক্ষকতা নিতে পারেন কখোনো, কিন্তু শিক্ষা সংস্কৃতির কাজেই বেশি আগ্রহী। তা না হলে এই রকম সুঠাম কাব্যগ্রন্থ লেখেন কী করে!
প্রায় কবিতার চারিত্রিক পদ্ধতি আলাদা। যেন শব্দ ও বাক্যের সাথে ভাবনার মিশ্রনে এক একটি গবেষনার ফল।
তাঁর হাত থেকে আশা করবো পরের গ্রন্থে আরেক ইসারা। প্রতিটি গ্রন্থে, কবিতা বা গদ্য যে গ্রন্থ হোক, আশা করব নতুন স্বর।
@ পিহু ( কাব্যগ্রন্থ) / প্রিয়াঙ্কা কর্মকার। প্রকাশক — রঙ মিলান্তি, কলকাতা, ভারত, প্রকাশকাল : জুলাই ২০২৪, দাম : ২৫০/- মাত্র।
সমালোচক পরিচিতি :– ঋদেনদিক মিত্রো ( Ridendick Mitro ) , পেশায় ইংরেজি ও বাংলাভাষায় কবি-উপন্যাসিক-গীতিকার-কলামিষ্ট-সমালোচক। স্প্যানিস ভাষা শিখেও এই ভাষায় আবার সাহিত্য করছেন। কলকাতা। ভারত।