Global Newz, Kolkata
Special Correspondent,
20th May’2024, Monday
বিভাগ : Medical Sociology
টেলিস্বাস্থ্য ও টেলিমেডিসিন
(Telehealth and Telemedicine)
জয়দেব বেরা
বর্তমান যুগ বিশ্বায়ন ও তথ্যপ্রযুক্তির যুগ।যার প্রভাব স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেও লক্ষণীয়।স্বাস্থ্যক্ষেত্রের দুটি গুরুত্বপূর্ণ আধুনিক পদ্ধতি হল – “টেলিস্বাস্থ্য” ও “টেলিমেডিসিন ” পদ্ধতি।স্বাস্থ্য সম্পর্কিত এই বিষয় গুলি অনলাইন মিডিয়া,ভিডিও কনফারেন্স,ফোন কল,ইমেল,স্যাটেলাইট প্রযুক্তি প্রভৃতির সাথে সম্পর্কিত।টেলিফোনের মাধ্যমে সর্বপ্রথম চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয় ১৯৮৯ সালে মেডফোন কর্পোরেশন এর মাধ্যমে। সাধারণত হৃদরোগীদের মধ্যে এই সেবা দেওয়া হয়। এরপর ১৯৯০ সালের দিকে মেডফোন তাদের একটি মোবাইল সেলুলার সংস্করণ করে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ১২টি হাসপাতাল এই ধরনের চিকিৎসা সেবা প্রদান করে থাকে।যদিও ভারতে এই পদ্ধতি ধীরে ধীরে বিকাশ লাভ করছে।টেলিস্বাস্থ্য ও টেলিমেডিসিন পরস্পর পরস্পরের সাথে ওতপ্রোতভাবে সংযুক্ত।প্রথমে আমরা জানবো টেলিস্বাস্থ্য সম্পর্কে।টেলিস্বাস্থ্য হচ্ছে টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সেবা ও তথ্য প্রদান করা। টেলিস্বাস্থ্য পরিষেবা রোগী এবং চিকিৎসা বিশেষজ্ঞগণের মধ্যে টেলিফোনে কথাবার্তার মতো যতটা সাদাসিদা হতে পারে আবার ঠিক ততটাই জটিলও হতে পারে।তবে বর্তমান সময়ে এই স্বাস্থ্য পরিষেবা খুব জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।এই পদ্ধতিতে এক দেশ থেকে কোনো চিকিৎসক ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে তার সেবা অন্য কোনো দেশের রোগীকে প্রদান করে থাকেন।উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, চিকিৎসকগণ রোগীদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য ই-মেইল বা ভিডিও কনফারেন্স পদ্ধতির ব্যবহার করেন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় দূরবর্তী দূরত্ব সত্ত্বেও তারা এই পদ্ধতিতে রোগীদের জন্য ঔষধপত্র লিখে দেওয়া ছাড়াও অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের পরিষেবা প্রদান করে থাকেন।
টেলিস্বাস্থ্য ক্লিনিক্যাল ও নন-ক্লিনিক্যাল উভয় ক্ষেত্রেই পরিষেবা প্রদান করে থাকে।এক্ষেত্রে ক্লিনিক্যাল এর ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে – ১)রোগ নিরূপন পদ্ধতির মাধ্যমে মেডিক্যাল চিত্র প্রেরণ করা,২) ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে লাইভ শিক্ষা চর্চা করা,৩)রোগ নিরূপণের জন্য স্বাস্থ্য উপাত্তগুলো প্রেরণ করা অথবা রোগ নিরাময়ের জন্য এটাকে অনেক সময় দূর তদারকি অথবা রিমোট মনিটরিং হিসাবেও উল্লেখ করা হয়,৪) রোগীর অবস্থা তদারকি ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে রোগের প্রতিরোধ করা অথবা স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটানো এবং ৫)জরুরি অবস্থায় টেলিফোনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরামর্শ দেওয়া।একে অনেক সময় ‘টেলিটারেজ’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়।আবার অন্যদিকে টেলিস্বাস্থ্য প্রযুক্তির নন-ক্লিনিক্যাল প্রয়োগ গুলি হল-১)মাঝে মধ্যে এই প্রযুক্তির কল্যাণে মেডিক্যাল শিক্ষায় দুরশিক্ষণ চর্চা করা হয়। এর মাধ্যমে রোগীর আচরণ ও সেবা সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া হয়,২)প্রশাসনিক ব্যবহার যেমন- টেলিস্বাস্থ্য নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণ এর মাধ্যমে তদারকি এবং স্বাস্থ্যসেবার উপস্থাপন,৩)টেলিস্বাস্থ্যের উপর গবেষণা,৪)অনলাইন তথ্য এবং স্বাস্থ্য উপাত্ত ব্যবস্থাপনা,৫)স্বাস্থ্য পরিচর্যার ব্যবস্থাপনায় সমন্বয় সাধন,৬)সার্বিক স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি।
টেলিস্বাস্থ্যকে আবার মূলত তিনভাগে বিভক্ত করা হয়ে থাকে।যথা:
১)সংরক্ষণ এবং সম্প্রচার এর মাধ্যমে টেলিস্বাস্থ্য সেবা (Store and Forward Telehealth): এই পদ্ধতিতে ডিজিটাল ইমেজ, ভিডিও, অডিও এবং ক্লিনিক্যাল উপাত্তগুলো সংগ্রহ করে এক জায়গায় সংরক্ষণ করা হয়।
২)রিয়েল টাইম টেলিস্বাস্থ্য (Real Time Telehealth): রিয়েল টাইম টেলিস্বাস্থ্য পদ্ধতির আওতায় টেলিযোগাযোগ এর মাধ্যমে তাৎক্ষণিক মিথস্ক্রিয়া চর্চা করা হয়। এই ধরনের পদ্ধতিতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভিডিও কনফারেন্সিং এর ব্যবহার করা হয়। ভিডিও কনফারেন্সিং এর সময় অন্যান্য প্রযুক্তিরও সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। মাঝে মধ্যে দ্বিমুখী শ্রোতা প্রযুক্তির মাধ্যমেও এই ধরনের স্বাস্থ্যসেবা চর্চা করা হয়।এই প্রসঙ্গে টেলি মানসিক স্বাস্থ্য,টেলি পুনর্বাসন, টেলি হৃদরোগ সেবা,টেলি নার্সিং,টেলি রেডিওলজি, টেলি দন্ত চিকিৎসা প্রভৃতির কথা বলা যেতে পারে।
৩)দূরবর্তী রোগী তদারকি (Remote Patient Monitoring): দূরবর্তী রোগী তদারকি পদ্ধতির আওতায় বায়োমেট্রিক উপাত্তগুলো সংরক্ষণ করে তা পাঠানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের সেন্সর ব্যবহার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, টেলি-ইইজি যন্ত্রটি রোগীর মস্তিষ্কে ইলেক্ট্রিক্যাল গতিপ্রকৃতি তদারকি করে এবং এই গতি রেখাগুলো একজন বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠিয়ে দেয়। এগুলো উপরোল্লিখিত রিয়েল টাইম পদ্ধতির মাধ্যমেও সম্পন্ন করা যায় অথবা স্টোর এবং ফরওয়ার্ড অথবা সংরক্ষণ এবং প্রেরণের মাধ্যমেও চর্চা করা যায়।
অপরদিকে, টেলিমেডিসিন হল টেলিস্বাস্থ্যেরই একটি অংশ।টেলিমেডিসিন কেবলমাত্র ক্লিনিক্যাল পরিষেবার সাথে সংযুক্ত।ক্লিনিক্যাল মেডিসিনের ক্ষেত্রে এখন টেলিমেডিসিন একটি দ্রুত উন্নয়নশীল পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্যগুলো টেলিফোন এর মাধ্যমে অথবা ইন্টারনেট ছাড়া অন্যান্য নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পরামর্শের জন্য প্রেরণ করা হয়। এই ক্ষেত্রে অনেক সময় দুরমুখী স্বাস্থ্য প্রক্রিয়া এবং পরীক্ষা- নিরীক্ষার সাহায্য নেওয়া হয়। টেলিমেডিসিন মাঝে মধ্যে খুবই সাদামাটা হতে পারে। যেমন- টেলিফোন মারফত রোগী কোনো স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের কাছে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরামর্শ চাইছেন। আবার স্যাটেলাইট প্রযুক্তি এবং ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে যদি রোগী ও চিকিৎসক পরামর্শ চর্চা করেন তাহলে সেটিকে আমরা আবার জটিল বলে মনে করে থাকি,বিশেষ করে রোগী এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের অবস্থান যদি দুইটি ভিন্ন দেশে হয়। টেলিমেডিসিন বলতে সাধারণত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারকে বোঝায়।এই টেলিমেডিসিন এর মাধ্যমে অনলাইন পদ্ধতিতে শারীরিক পরীক্ষা, মানসিক মূল্যায়ন এবং চক্ষুরোগ নিরূপণের মতো বিভিন্ন কাজ গুলো করা হয়ে থাকে। যাইহোক,টেলিমেডিসিন বলতে ইলেকট্রনিক অডিও এবং ভিজ্যুয়াল এর মাধ্যম ব্যবহার করে রোগী এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর মধ্যে রিয়েল-টাইম দ্বিমুখী যোগাযোগের মাধ্যমে দূরবর্তী ক্লিনিক্যাল পরিষেবার বিধানকে বোঝায়।টেলিমেডিসিনকে মূলত তিনটি ভাগে বিভক্ত করা যায়।এগুলি হল- সংরক্ষণ ও প্রেরণ পদ্ধতি,দূর তদারকি পদ্ধতি, মিথস্ক্রিয়া সেবা।
সবশেষে বলা যেতে পারে, টেলিস্বাস্থ্য ও টেলিমেডিসিন উভয়ই কিন্তু পরস্পরের সাথে সংযুক্ত।পার্থক্য মূলত একটাই সেটি হল-Telemedicine refers to remote medical services. On the other hand, Telehealth is related to non-medical and medical services.স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ টেলিচিকিৎসার ক্ষেত্রে নিজেদের বিশেষায়িত শিরোনামের আগে টেলি শব্দ যুক্ত প্রিফিক্সটির ব্যবহার করেন। যেমন- টেলিচিকিৎসায় যে বিশেষজ্ঞ রেডিওলজি ব্যবহার করেন তিনি টেলিরেডিওলজি শব্দটি প্রয়াগ করেন তেমনি টেলিচিকিৎসার মাধ্যমে যে ব্যক্তি কার্ডিওলজি চর্চা করবেন তিনি টেলিকার্ডিওলজি শব্দটি প্রয়োগ করেন।অর্থাৎ এই দুটি পদ্ধতিকে প্রযুক্তিগত বা ডিজিটাল স্বাস্থ্য পরিষেবা বলা যেতে পারে।এই দুটি বিষয় অনলাইনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে।এই পদ্ধতি গুলোর মাধ্যমে রোগীকে ও চিকিৎসককে শারীরিকভাবে মুখোমুখি উপস্থিত হওয়ার প্রয়োজন হয়না।এই পদ্ধতিতে অনলাইনের মাধ্যমে তথা টেলিযোগাযোগ এর মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়া যায়।
About the author:-
অতিথি অধ্যাপক, সমাজতত্ত্ব, গভর্নমেন্ট কলেজ অফ নার্সিং, শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ এন্ড হসপিটাল,উলুবেড়িয়া