কুষ্ঠ রোগ (Leprosy Disease)
জয়দেব বেরা
কুষ্ঠ রোগটি একটি ত্বক ও দীর্ঘস্থায়ী অঙ্গ-স্ফীত সমন্ধীয় রোগ।এই রোগটি হ্যানসেন রোগ(Hansen disease)নামেও পরিচিত। এই রোগটি ম্যাইকোব্যাকটেরিয়াম লেপরের কারণে ঘটে থাকে। এটি ত্বক ও স্নায়ুর একটি সংক্রমণ। এই ব্যাধি ত্বক, শ্লৈস্মিক ঝিল্লি, পেরিফেরাল স্নায়ু, চোখ ও শ্বাসযন্ত্র প্রভাবিত করে।WHO এর তথ্য অনুসারে, কুষ্ঠ সম্ভবত শ্বাসযন্ত্রের মাধ্যমে ও পোকামাকড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। আবার অনেকেই মনে করেন, এটি ছোঁয়াচে বলে একজনের থেকে অন্যজনে ছড়িয়ে পড়ে।আন্তর্জাতিক এক সংস্থার মতে, দেশে এখনো বছরে নতুন করে ৪ হাজারেরও বেশি মানুষ কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হয়।
এ রোগে আক্রান্ত হলে কেবল শারীরিক যন্ত্রণাই নয়, মানসিক এবং সামাজিক নিগ্রহেরও শিকার হতে হয় রোগীকে। যদিও চিকিৎসকেরা বলছেন, প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে কুষ্ঠ সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য একটি রোগ।এক্ষেত্রে MDT(Multi-drug Therapy)।কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত প্রায় ৩০ % লোক স্নায়ু ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ভারতে বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস পালিত হয় ৩০ শে জানুয়ারি তারিখে।
●লক্ষণ:-
এই রোগের লক্ষণ গুলি হল-
১)ফ্যাকাশে দাগ বা ছোপযুক্ত চামড়া, মূলত মসৃণ।অসার ও বিবর্ণ ক্ষত যা পার্শ্ববর্তী এলাকার তুলনায় হালকা বর্ণের।
২)চামড়ার উপর ক্ষুদ্র উঁচু ফোঁড়া জাতীয় বস্তু।শুষ্ক ও শক্ত চামড়া।পায়ের পাতার নিচের অংশে ঘা।
৩)মুখের বা কানের কিছু অংশ উঁচু হয়ে ফুলে যাওয়া।চোখের পাতা ও ভ্রূ র সম্পূর্ণ বা আংশিক ক্ষতি বা নষ্ট হয়ে যাওয়া।
৪)সংক্রামিত জায়গায় অসারভাব ও ঘাম হওয়া।
নার্ভের বা স্নায়ুর বৃদ্ধি,
বিশেষত কনুই ও হাঁটুর চারপাশে।
৫)মুখের নার্ভে বা স্নায়ুতে প্রভাব পরার দরুন অন্ধত্ব।পা ও হাত অসমর্থ হয়ে যাওয়া।
৬)চামড়ায় জ্বালাভাব অনূভব করা।ব্যথাযুক্ত বা
সংবেদনশীল স্নায়ু।
●কারণ-
কুষ্ঠ খুব সংক্রামক রোগ নয় কারণ মাত্র ২০ ভাগ কুষ্ঠরোগী থেকে সংক্রমণ সম্ভব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে কুষ্ঠ রোগের সংক্রমণ হয়, চিকিৎসা করা হয়নি এমন জটিল কুষ্ঠরোগীর নাক দিয়ে আগত জলীয় পদার্থ এবং শ্বাসনালি থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরা সর্দি থেকে। আবার কখনো এই সংক্রমণ হতে পারে সংক্রামিত ত্বকের সংস্পর্শে।
●সামাজিক বৈষম্য ও কুসংস্কার-
কোন রোগই পাপের ফল হতে পারেনা।এটা সম্পূর্ণ একটি কুসংস্কার।রোগ নানান কারণে হতে পারে।যার একটি বিজ্ঞানসম্মত যৌক্তিকতা রয়েছে।এই কুষ্ঠ রোগকে নিয়ে আমাদের সমাজে নানান কুসংস্কার রয়েছে।এই রোগকে নিয়ে সমাজে নানান বৈষম্যও করা হয়।এর ফলে এই রোগের রুগীদের সামাজিক ও মানসিক নানানবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।এই রোগ নিয়ে যে কুসংস্কার গুলো রয়েছে তা হল- উত্তর ভারতে কুষ্ঠ রোগকে একটি “অস্পৃশ্য” অবস্থার সাথে সমতুল্য করা হয়। মনে করা হয়, কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা এই রোগ থেকে নিরাময় হওয়ার পরেও প্রায়শই টিকে থাকে, যা বিবাহবিচ্ছেদ, উচ্ছেদ, চাকরি হারানো এবং পারিবারিক ও সামাজিক থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার আজীবন সম্ভাবনা তৈরি করে।ব্রাজিলেও লোককাহিনী অনুযায়ী মনে করা হয় যে, কুষ্ঠ রোগ কুকুর দ্বারা সংক্রামিত একটি রোগ, বা এটি যৌন অশ্লীলতার সাথে যুক্ত বা এটি পাপ বা নৈতিক লঙ্ঘনের জন্য একটি শাস্তি।এটি ঈশ্বরের দেওয়া শাস্তি।পাপের ফল প্রভৃতি।
●নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিরোধ –
১)১৯৮১ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার Study group (পর্যালোচনা উদ্দেশ্যে গঠিত দল) যে সুপারিশ করেছিলেন তা হল মাল্টিড্রাগ থেরাপি দ্বারা কুষ্ঠ রোগের সম্পূর্ণ নিরাময় ও ওই রোগ নির্মূল করা সম্ভব। MDT তিনটি ওষুধের কথা বলে— সেগুলি হল- ডাপ সোন, রিফামপিসিন, এবং ক্লোফাজাইমাইন।এই তিনটি ওষুধের সংমিশ্রণ রোগজনক শক্তিগুলিকে মেরে ফেলে এবং রোগীকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলে।
২)প্রাথমিক অবস্থায় চিহ্নিতকরণ এবং চিকিৎসাই কিন্তু শারীরিক অঙ্গবিকৃতি এড়াতে সাহায্য করে।
৩)ভালো কুষ্ঠ রোগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিতে হবে।
৪)রোগীকে কেবল শারীরিক নয় সামাজিক ও মানসিকভাবে সাপোর্ট করতে হবে।
•• Joydev Bera,Guest Lecturer In Sociology at Sebabrata Institute of Nursing & Govt. College of Nursing, Sarat Chandra Chattopadhyay Government Medical College and Hospital, Uluberia and Matangini Govt. College Of Nursing, Tamralipto Govt. Medical college &
Hospital,Tamluk & Sanjiban College of Nursing,Uluberia, Counselor & Book Writer.