বন্যা রুখতে নতুন আশ্চর্য বুদ্ধি দীলিপ কুমার মজুমদার,
কলমে ঃ ঋদেনদিক মিত্রো
—————————— ———–
Global Newz, Reporter, কলকাতা,
ঋদেনদিক মিত্রো
কিছু প্রাসঙ্গিক কথা বলে আসব সংবাদের শীরনামের বিষয়ে। কারণ, বিষয়টির গুরুত্ব বুঝাতে কিছু কথা বলতে হচ্ছে আগে।
বন্যা, এই শব্দটি আমাদের আতংক তৈরি করে।এর ভয়াবহ আক্রমনে কত সভ্যতা ধ্বংস হয়েছিল। প্রতি বছর বিশ্বের নানা দেশে এই “বন্যা” নামক শব্দটি কত সম্পদ নষ্ট করে, কত গৃহ ধ্বংস করে, কত প্রানী হত্যা করে, কত সুন্দর সেতু, রেলপথ, গাড়ি পথ নষ্ট করে। এর ফলে দুর্ভিক্ষ, মড়ক, আর দারিদ্রের যন্ত্রণা। সরকার ও জনগনের সম্পদ এইভাবে তচনচ হয়।
সংবাদ মাধ্যম খুললেই আমরা এইগুলি দেখি। সেটা ইন্টারনেট বা মুদ্রিত বা ইলেক্ট্রনিক সংবাদ মাধ্যম, যেটাই হোক। আর, সব চেয়ে আতংকে থাকেন সমুদ্রতীরস্থ বসবাসকারী মানুষেরা। একটা ঝড় উঠলে, তাঁরা আতংকে কাটান।
সভ্যতায় বন্যা তাই একটা মহা আতংক। কত শস্য নষ্ট হয়। মানুষের সাথে পশু, পাখি, কীট, সকলে হারায় প্রিয় আশ্রয়স্থল আর নিজের প্রিয়জন, প্রতিবেশি, মনের মানুষ।
আমার এক কবি-সাংবাদিক বন্ধু বলেছিল যে সুন্দরবনে বন্যায় সে একবার গোখরে সাপের পাশে শুয়েছিল। সেই সাপ নিজের জীবন নিয়ে এত বিপন্ন ছিল যে সে হিংসা ভুলে মানুষকে বন্ধু ভেবে পাশে শুয়েছিল।
এক্ষেত্রে, একটা কাহিনী বলি, বিপদে জীবজগৎ কত বিপন্ন হয়। আমাজন জঙ্গলে আগুন লাগার পরে সেখানে পশুপাখিদের বাঁচাতে বিভিন্ন দেশের সেনা বিভাগ থেকে রক্ষাকারীদের পাঠানো হয়েছিল। তাদের কয়েকজন একটা বিপদজনক জায়গায় ঢুকে গেল, সেখানে শুধু আগুন আর আগুন। তারা একটা বড় জলাশয়ে নেমেছে বাঁচার জন্য। তখন একটা বাঘ দৌড়ে এসে জলে পড়ে গেল। জলে দাঁড়িয়ে থাকা সৈনিকটি চমকে গেল, কারণ এবার তাকে বাঘের পেটে যেতে হবে। কিন্তু বাঘা হাল্কা সাঁতরে এসে সেই সৈনিককে জড়িয়ে ধরল বন্ধু হিসেবে সামনের দুটি পা দিয়ে, একদম আঁকড়ে ধরল। সেই ছবি আমরা সংবাদমাধ্যমে দেখেছি।
প্রতিটি প্রানীর মাঝে কত ভালোবাসা আছে, এগুলি সেটার প্রমাণ। মানুষের ভিতরে ভালবাসায় খাদ থাকতে পারে, কিন্তু অন্য জীবদের মধ্যে ভালোবাসা খাঁটি। জানিনা, মানুষ কী করে নিজেকে সেরা উন্নত জীব বলে দাবী করে।
বিভিন্ন অরন্যে আপনি বেড়াতে গেলে, দুই পাশ খোলা তিন বা চারচাকা গাড়িতে বসে অরন্যের ভিতর দিয়ে যাবার সময় সিংহরা এসে আপনাকে জড়িয়ে ধরে কোলাকুলি করে। আদর করে। সত্যি, এইসব দৃশ্য দেখলে আমাদের চোখে জল আসে। কত ভালোবাসা ছড়িয়ে আছে বিশ্বে, আর মানুষজাত যত রকম বদমায়েসি ও নির্মমতা নিয়ে জীবন যাপন করে। তারপরে দম্ভ করে দাবী করে সে নাকি সভ্যতার সেরা উন্নত জীব। নিজের সুবিধা বাগাতে নিজের মতন করে নিজেকে ভুল বুঝিয়ে সেইটা অন্যদেরকে বুঝায়। এই মানুষজাত যতদিন না মনে ও অভ্যেসে স্বাভাবিক হবে ততদিন কোনো রাজনীতি, কোনো ধর্ম, কোনো দার্শনিক জ্ঞান, এসব কোনো কিছুই শান্তি আনতে পারেনা। আন্দামানে সুনামির পরে দেখা গেলো একটি সমুদ্র কচ্ছপ ও বেজির বন্ধুত্ব। তারা দুজনে দুষ্টুমি করছে আর খেলছে, খুনসুটি করছে। আমরা, রাস্তায় কুকুর, বেড়াল, পাখিদের লক্ষ্য করলে দেখব, কত কথা বলে ওরা একে অপরের সাথে, কত অভিমান করে মানুষ জাতের প্রতি। আমরা সেগুলি দেখেও দেখিনা। এইভাবে আমরা নিজেদের মিথ্যা সুখে ডুবিয়ে রাখি, সামগ্রিক দায়বদ্ধতা থেকে অন্যমনস্ক হয়ে। এইসব কথা ভাবলে আমাদের বিবেকে কি ধাক্কা দেয় না?
এবার আসছি, শীরনামে উল্লেখ করে দেওয়া সংবাদে।
আমরা জানি, আমাদের রাজ্য ও দেশ, এবং এই রকম ধরনের দেশে মানুষের তৈরি বন্যা হয়। Man made flood. কারণ, ইচ্ছে করে সঠিক নিয়মে বাঁধ নির্মিত হয় না। বারবার বন্যা হয়, সরকারি টাকা আসে, সেটার ১/১০০ভাগ খরচ না করে লুট হয়ে ঢুকে যায় স্থানীয় রাজনীতি নেতানেত্রী ও তাদের রাজনীতি নিকট সহায়কদের বাড়িতে। আমি মানব জাতীর একজন। তাই, পক্ষপাত করে আমার রাজ্য বা দেশের খারাপ সত্যকে ভালো বলে দেখাতে পারবো না বা লুকিয়ে যেতে পারবো না। শুধু বন্যা নয়, সব রকম দুর্যোগে সরকার থেকে আসা ত্রান কোথায় যায় কেউ জানেনা।
অন্যদিকে, প্রতিনিয়ত বন্যা আনার পথ করা থাকে বন্যার জন্য উপযুক্ত বাঁধ না নির্মান করে।
এসব, সরকারি ইচ্ছে বা অনিচ্ছে। সেটা সরকার বুঝুক। আমরা কী করতে পারি।
আমরা নাগরিক হিসেবে শুধু কাঁদতে পারি, রাজনীতি থেকে ধেয়ে আসা ও অরাজনৈতিক দিক থেকে ধেয়ে আসা নানা দুর্যোগে। কারণ, এর চেয়ে বেশি অধিকার কি কোনোদিন কোনো সরকার পক্ষ আমাদের দিয়েছে, জানিনা।
কথাটা আমার দায়িত্বে আমি বলছি। তাই এই বক্তব্যের জন্য শুধু আমি দায়বদ্ধ। ভুল বললে সরকার বা কোনো বেসরকারি সংস্থা আমার ভুল ধরিয়ে দিন। আগে নিজেদেরকে প্রশ্ন করুন, আপনি আমাকে বুঝাতে আসছেন নিজের বিবেকের কাছে ঠিক থেকে, নাকি কোনো রাজনীতি বা ভয়ংকর ব্যাক্তিকে সন্তুষ্ট করার জন্য। এইভাবে করে-করে তো সবাই কোন ঠাসা। এরপর আপনার পরিবার, সমাজ ও আপনি কোথায় আশ্রয় নেবেন!
এবার আসি, সেই শীরনামের কথায় সরাসরি। আসলে জীবনের মাঝে এইসব সত্য ও জিজ্ঞাসাগুলোকে জাগিয়ে দিলেন ঐ লোকটি। লোকটি, এই শব্দে ওনাকে সাধারণ ভাবিনি। আমি এইভাবে উনাকে উদ্দেশ্য করে বলছি, কারণ, সমাজের একজন অতি সাধারণ লোক কী বিরাট একটা পদ্ধতি জানালেন আমাকে। চিন্তা করা যায় না।
উনি আগেই জানিয়ে দিয়েছেন যে তাঁর এই বক্তব্যের জন্য তাঁর ট্রাস্টে টাকা আসুক, এই ছক করছেন না। রাজ্যে, দেশে, বিদেশে, সব জায়গায় এই নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে নদী বাঁধ দিলে তাহলে নদী বা সমুদ্রের ক্ষতি হবেনা।
এর আগে বাঁধ দেওয়া হতো সিমেন্ট দিয়ে বা এই রকম কোনোভাবে, বাঁধকে পাকাপাকিভাবে টিকিয়ে রাখতে। নইলে প্রায় জায়গায় সাধারণ মাটির বাঁধ।
আগে বলি, এই মানুষটির পরিচয়। ইনি
Save Calcutta Campaigning Network, নামক ট্রাস্টের সভাপতি, এটাই জানালেন। প্রায় ২০ বছরের ট্রাস্ট এটি। নিজেরা নিজেদের মত সময় কাটান, কিছু ভালো চিন্তা করতে ভালোলাগে তাই। যখন যতটুকু সম্ভব কিছু কাজ করার সামর্থ থাকলে করেন। উনি জানালেন যে দেশে যারা যে প্রান্ত থেকে পারুক এই কাজগুলি করুক। তাতে সমাজ, সভ্যতা বিপদ মুক্ত হবে নানা দিক থেকে।
এই মানুষটির নাম দিলীপ কুমার মজুমদার। অফিস : কলকাতা, সোনারপুরে। কলকাতা – ১৫০, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।
ইনি যেসব কথা বললেন, আমরা আলোচনার মাধ্যমে যেটা পেলাম, সেটা একত্রে সাজিয়ে বলছি। দীলিপ বাবু ছাত্রাবস্থায় এক ভদ্রলোকের কাছে তালগাছের শক্তি ও এর শিকড়ের শক্তি নিয়ে একটা গল্প শুনেছিলেন। সেই কাহিনী নিয়ে নিজের চিন্তা মিশিয়ে এত বছর পরে এই চিন্তা উনি আমাদের উপহার দিলেন। সত্যি, আমরা খেয়াল করিনা কত লোকের কত কথা। কিন্তু, তাঁদের চিন্তাকে একসাথে মেলালে সেটার গুরুত্ব কত বড় হতে পারে, সেটা আমরা জানিনা। যদিও কিছু মানুষ নিজেদের অনেক গোপন অপরাধ লুকাতে বাইরে অনেক ভালো কথা বলেন। সেগুলি আলাদা। সমাজে নানা রকম মানুষ।
কিন্তু, এই সাক্ষাতকারটি সৎ সাক্ষাতকার হিসেবে আমার মনে হয়েছিল, তাই নিয়ে এলাম আপনাদের কাছে।
(১) সিমেন্ট বা পাথর দিয়ে নদীবাঁধ দিলে পরে সেটা ভেঙে-ভেঙে জলে পড়ে জলের শুদ্ধতা ও স্বাভাবিক স্রোতকে বিকৃত করে।
(২) বারবার মাটির বাঁধে কোনো ফল হয় না। বিপদ তো ঘটে, অধিকন্তু নদীর ক্ষতি হয়, সেই বাঁধের মাটি পরপর ধুয়ে জলে ডুবে গিয়ে নদীর স্বাভাবিক গতিকে ব্যাহত করে। এইসব প্রক্রিয়াগুলি সহজ চোখে বুঝতে পারা যায় না, কিন্তু ঘটে। তাই নদী ও সমুদ্রের নানা বিপন্নতা আসে নানাভাবে। এর সাথে আরো অন্য কারণ থাকলেও এগুলিও কারণ আছে।
(৩) নদীর পাশে বা সমুদ্রের পাশে ঝাউবন থাক। কিন্তু, তাতে মাটি আটকায় কিছুটা, ঠিকই, কিন্তু, অনেক মাটি ক্ষয়ে জলে নামে। এবং বন্যা তো আটকায় না।
(৪) তাই, তালগাছ লাগাতে হবে। ত্রিকোন ছকে ফাঁক রেখে-রেখে তালগাছ লাগাতে হবে। বাঁধের চওড়া হবে তিরিশ ফুট। তাতে খাদ করে তালগাছ লাগিয়ে দিলে সেই শিকড় ও কান্ড অনেক নিচে চলে যাবে, তারপর তালগাছের বুক অবধি মাটি দিতে হবে। এঁটের বা অল্প দোঁয়াস মাটি। গাছ লাগানো ও বড় করে পরে গাছের বুক অবধি মাটি দেওয়া, এটা সময় সাপেক্ষ, কিন্তু এই পরিকল্পনা দীর্ঘ স্থায়ী ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে। এবং পরিবেশ দুষন হবে না।
এবার এই ছক নিয়ে বাঁধ দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ারগন কিভাবে সাজাবেন সেটা তাঁদের ব্যাপার। কিন্তু মূল কাজ এটি।
আমি চিন্তা করলাম, সত্যি একটি বিরাট কাজ করলাম, এই মানুষটির সাথে সাক্ষাত করে। এই দুনিয়ায় কত মানুষের মাঝে কত উন্নত বুদ্ধি আছে, কত উন্নত ইচ্ছে আছে, খুঁজে দেখে সেগুলি কাজে লাগালে দেশে, বিশ্বে কত উন্নতি হতে পারে।
আসুন, আমরা এই রকম নানা সৎ বুদ্ধির মানুষদের খুঁজে বেড়াই।
—————————— ——————-
About the writer : —
ঋদেনদিক মিত্রো ( Ridendick Mitro) পেশায় ইংরেজি ও বাংলাভাষায় কবি-উপন্যাসিক-গীতিকার-কলামিস্ ট। স্প্যানিস ভাষা শিখেও এই ভাষায় লিখতে সচেষ্ট হয়েছেন। কলকাতা, ভারত।