মন্ত্রীর হাতের সম্মানে বিখ্যাত ফিয়োনা পারভিন, ওয়াহিদা খাতুনের লেখা সুন্দরবনের উপর কবিতা “বাদাবনের কান্না” আবৃত্তিতে, সুন্দরবন উৎসব ২০২৩
স্টাফ রিপোর্টার, globalnewz, কলকাতা,
বৃ্হস্পতিবার, ৪ জানুয়ারী, ২০২৪
সুন্দরবন মন্ত্রীর থেকে সম্মান পেলেন আবৃত্তি শিল্পী ফিয়োনা পারভিন, ও প্রশংসিত কবি ওয়াহিদা খাতুনের কবিতা “বাদাবনের কান্না”
সুন্দরবনকে ১৯৮৯ সালে “বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ” ও ১৯৯৭ সালে রাষ্ট্রসংঘর UNISCO দপ্তর থেকে “ওয়ার্ল্ড ন্যাচার্যাল হেরিটেজ সাইট” হিসেবে ঘোষনা করা হয়। অর্থাৎ, ইউনেস্কো থেকে ঘোষিত পৃথিবীর সেরা ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলির মধ্যে সুন্দরবন একটি।
সেই সুন্দরবনের উপরে কবিতা “বাদাবনের কান্না”র জন্য সুন্দরবন বিষয়ের মন্ত্রী মাননীয় বঙ্কিম চন্দ্র হাজরার প্রশংসা ও তাঁর হাত থেকে সম্মান উপহার পেলেন আবৃত্তি শিল্পী ফিয়োনা পারভিন ( Phiona Parvin) ।
এ এক রোমাঞ্চকর পর্যায়।
বর্তমান সময়ে আবৃত্তি শিল্পীদের মধ্যে একজন ফিওনা পারভিন। “Phiona Parvin” ইউটুব চ্যানেল হল ফিয়োনার আবৃত্তি শিল্পের চাক্ষুষ প্রমাণ। এখন পড়াশুনা করছেন, ছাত্রী, কিন্তু এর মধ্যেই তিনি বাঙালীদের কাছে একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা পেয়েছেন, একথা এড়িয়ে যাওয়া যায় না। তাঁর কন্ঠ ও শব্দ প্রকাশের ভঙ্গী তাঁকে এই কঠিন প্রতিযোগীতার যুগেও আলাদা গুরুত্বের জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে।
কবিতাটি বেরিয়েছিল, ইউটুব শিরনাম ” বাদাবনের কান্না/ Phiona Parvin”, পুরস্কার নেওয়ার ইউটুব এর শিরনাম, “Crown Phiona Parvin | Sundarban dibos”। দুটি ইউটুব খুলে দেখুন, আমাদের সংবাদের ব্যাখ্যা ভিত্তিক সত্যতা পাবেন।
“জলদর্চি” ওয়েবসাইটে (“www.jaladarchi.com”) বেরিয়েছিল ২০২২ সালে ০৯ এপ্রিলে এই কবিতাটি, ওয়াহিদার লেখা সুন্দরবনের আরোও কয়েকটি কবিতার সাথে। কবিতায় আছে “পশুর নদী”, এটি বাংলাদেশে খুলনায় অবস্থিত সুন্দরবনের অংশ। আমরা অনেকেই জানি যে সুন্দরবন হল ভারত ও বাংলাদেশ নিয়ে বিরাট অরন্য ও গ্রাম, শহর মিশ্রিত সভ্যতা। ভারতে ৪০%, বাংলাদেশে ৬০%। তাই অনেকে ভাবেন সুন্দরবন মানে ক্যানিং পেরিয়ে কিছু দ্বীপ ও অরন্য, তা কিন্তু নয়। সুন্দরবন এই পৃথিবীতে এক বিরাট মর্যাদার অধিকারি। সারা বিশ্ব থেকে বহু ভ্রমনার্থিদের ভীড় হয় এখানে, গবেষকগন আসেন গবেষনা করতে।
বাদাবনের কান্না
[ “পশুর নদী”, বাংলাদেশের খুলনায় আছে এই নদী, সুন্দরবনের অংশ। দুটি দেশের অংশ নিয়েই সুন্দরবন ]
পশুর নদীর কাছে পেলাম বনমোরগের দেখা,
লাল ঠোঁটেতে দেখতে পেলাম প্রাচীন পুঁথির লেখা ;
নোনা মাটি বললো ডেকে শোনো আমার কথা,
খোঁজ করে নাও আড়াই হাজার বছরের সভ্যতা ;
রূপকথা নয় রূপকথা নয় বানর দেখায় খাতা,
কেউড়া রঙে আঁকা তাতে জলদস্যুর মাথা ;
দাঁত খিঁচিয়ে বললো শেষে আরো হদিশ চাও?
সুন্দরি আর গরান বনে নমুনা পাবে যাও!
পলকেতে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে বলে পাখি,
দস্যুরা সব গাছ কেটেছে আমরা মরবো নাকি?
দলে-দলে বনের যতো পশু এলো চলে,
আড়াই হাজার বছর আগের দলিল নিয়ে গলে;
সেই দলিলে লেখা আছে আগের সুন্দর জীবন,
একে-একে ধ্বংস হচ্ছে ধেয়ে আসছে মরণ;
এক-এক রকম ভঙ্গিমাতে সবাই করে নালিশ ,
বোবামুখের কান্নায় ভেজে বনদেবীর বালিশ ;
জোনাকিরা নালিশ দিয়ে বসলো গাছে গিয়ে,
আদি যুগে চলতে পথে আমার আলো দিয়ে;
মানুষের কর্মফলে-ই আমাদের এই অবস্থা!
বন্যজগৎ ধ্বংস হলে টিকবে তো সভ্যতা?
নালিশনামা হাতে নিয়ে–
ছুটছি বনের ভিতর দিয়ে–
হোঁচট খেয়ে পাথর গায়ে
ব্যথা পেলাম বিষম ঘাঁয়ে;
বললো পাথর শেষে–
ব্যঙ্গ করে হেসে–
আগুনের ব্যবহার শেখানো দলিল খানি;
অনাদরে ডুবে আছি আগে তলো টানি!
কিযে শিক্ষা পেলাম আমি বন্যের অরণ্যে ;
ম্যানগ্রোভ যে ধ্বংস হবে বর্বরতার-ই জন্যে ;
চারিদিকে হাহাকার বদ্বীপ বাসির চিৎকার,
অস্তিত্বের লড়াই এ রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার ;
দ্বীপ গুলি সব ডুবছে জলে প্রকৃতি দেয় হুঙ্কার,
আসছে আওয়াজ উদ্বাস্তুদের বুক ভাসানো কান্নার ;
লোহাচরা,বালিয়াড়ি,ঘোড়ামারা ডুবছে,
চারিদিকে দেখো চেয়ে প্রকৃতি যে ফুঁসছে ;
সুন্দর বন বলছে হেঁকে বাঁচাও অরণ্য,
নইলে ডুবে মরবে সকল জীব ও বন্য!
——–
নানা পুস্তক ও ওয়েবসাইট নিয়ে ব্যাস্ত থাকেন পারভিন।
ওয়েবসাইট খুলে কবিতা খুঁজতে-খুঁজতে কবিতাটি ফিয়োনা খুঁজে পান। সেটি শিক্ষা মূলক কাজের জন্য আইনীয় পথে সেই পত্রিকা থেকে নিয়ে ছিলেন ও আবৃত্তি করেন।
সেই কবিতাকে ফিয়োনা উপযুক্ত আবৃত্তিতে ও গুরুত্বে “Phiona Parvin” ইউটুব চ্যানেলে বের করেন। সেটা বেরুনোর অনেক দিক পরে ঘটনাক্রমে ইউটুবে দেখতে পান ঋদেনদিক মিত্রো ( Ridendick Mitro) ।। তারপর ঋদেনদিক আবৃত্তিটি নিয়ে মতামত দিয়েছিলেন যে এই কবিতাটি সুন্দরবনের উপরে একটি দুর্লভ লেখা ও সেই সমতায় আবৃত্তি। এটি নিয়ে সুন্দরবন দপ্তরে পৌঁছে দিলে এটি উপযুক্ত মর্যাদা
পাবার সম্ভবনা আছে।
এদিকে ঘটনাক্রমে ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ সালে সুন্দরবন উৎসব হয়, বাৎসরিক নিয়ম অনুযায়ী।সেখানে সুন্দরবন বিষয়ক মন্ত্রী মাননীয় বঙ্কিম চন্দ্র হাজরার ( Hon’ble Minister of Sundarban Affairs, Bankim Chandra Hazra. West Bengal, India) উপস্থিতিতে ফিয়োনা আবৃত্তি করেন কবি-গীতিকার ওয়াহিদা খাতুনের ( Wahida Khatun) “বাদাবনের কান্না” কবিতাটি। কবিতাটির লেখনির স্তর ও আবৃত্তি শিল্পীর বাচিক স্তর মুগ্ধ করে মাননীয় মন্ত্রীকে। তিনি এই কবিতার রচনাকে ও আবৃত্তি শিল্পীকে উচ্চ প্রসংসা করেন ও পদক সহ ফুলের গুচ্ছ তুলে দেন ফিয়োনার হাতে।
এই বিরল সম্মান দেবার জন্য আমরা এই সুন্দরবন উৎসব কমিটি ও মন্ত্রী মশাইকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি।
এই পুরস্কার পাবার ইউটুব দেখে, পরে ফিয়োনাকে ঋদেনদিক মিত্রো জানিয়েছেন তাঁর সেই ভবিষ্যত বানী লেগেছে কিভাবে। এই ভবিষ্যত বানীর সফলতায় ঋদেনদিক ছিলেন খুব রোমাঞ্চিত।
এই খবর আমাদের দপ্তরে আসে। আমরাও রোমাঞ্চিত। সংবাদটি করলাম।
এখানে উল্লেখ্য, কবি-গীতিকার ওয়াহিদা খাতুন একজন বিশিষ্ট কবি, গীতিকার, সঠিক যুক্তির সমাজ সংস্কারক ও একটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষিকা। মুর্শিদাবাদের মেয়ে। ফিয়োনা মুর্শিদাবাদের নয়, সুন্দরবন এলাকার মেয়ে। দুজন কেউ কারুর কাছে পরিচিত নন আজোবধি।
ওয়াহিদা কলকাতার বিখ্যাত “ZODIAK MUZIK HOUSE ” কোম্পানী থেকে ২০২১ সালে স্টাফ গীতিকার নেবার অডিশনে পাস করেন। ইউটুব চ্যানেল — Zodiak Muzik, Zodiak TV, খুলে দেখুন, এঁদের অনেক কাজ পাবেন। এঁদের আছে সিনেমা সংস্থা ও নানা মুখি দিক। সারা বাংলা থেকে আড়াইশ জন গীতিকার এই গীতিকার নেবার পরীক্ষায় পরীক্ষা দেন পদ্ধতির রীতি অনুযায়ী, এবং পাস করেছিলেন মাত্র পনেরো জন। তার মধ্যে মুসলমান পরিবার থেকে ছিল একমাত্র এই ওয়াহিদা খাতুন। কৃতির কোনো আলাদা ধর্ম বা পরিচয় নেই। কিন্তু, নানা রকম কারণে ইসলাম ধর্ম পরিচিত পরিবার থেকে, বিশেষত প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বেরিয়ে এসে এই রকম জায়গায় নিজেদের দাঁড় করানো, এই রকম সামাজিক অবস্থার ক্ষেত্রে খুব কঠিন। এই সমাজে প্রায় সব নারীদের ক্ষেত্রেই এটা সত্য বলে আমাদের ধারণা। ব্যাতিক্রম এখানে ধরা হয় না।
পারিবারিক ও সামাজিক বহু দুর্গম পরিস্থিতি অতিক্রম করে বেরিয়ে আসা ওয়াহিদা এখন একজন ব্যাস্ত গীতিকার ও কবি। ফিচার সিনেমা “ভয়”, এতে ওয়াহিদার লেখা দুটি সঙ্গীত আছে। এই সিনেমা থেকে তিনি সিনেমার গীতিকার হিসেবে পরিচিত।
অয়ন্তিকা চক্রবর্তী, গত শতকের বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী বিদূষী হৈমন্তি শুক্লা, কুমার চঞ্চল, শৈবাল চৌধুরী, সুপ্রীতি বিশ্বাস হালদার, মৌ আচার্য, ঐশিকী স্যান্যাল, সোমিন্দ্র কুমার, মিস প্রীতি প্রমুখ শিল্পী সহ আরো অনেকে ওয়াহিদার লেখা গান গাইছেন।
নানা কোম্পানী ও ব্যাক্তি ওয়াহিদার লেখা গান নিচ্ছেন।
২০২১ সালে “Zodiak Muzik House” থেকে Staff Lyricist হিসেবে Audition Pass করার পরে ওয়াহিদার লেখা “কেন কাঁদো মা গো আমার” লেখাটি আর-কে-পালের সুরে অয়ন্তিকা চক্রবর্তীর কন্ঠে বেরোয় “Zodiak Muzik House ” কোম্পানীর “Zodiak Muzik” ইউটুব চ্যানেলে। এটি এই সময়ে একটি নামী কোম্পানি। নচিকেতা সহ পূর্বের অনেক বিখ্যাত শিল্পীদের নিয়ে এঁরা কাজ করেন ও করছেন।
সঙ্গত কারণেই এই ওয়াহিদা খাতুন বাংলাদেশ সহ অন্য অনেক দেশে পরিচিত। অন্যদিকে ফিওনা পারভিন ওয়াহিদার জনপ্রিয়তাকে আরো বাড়িয়ে দিলেন নিজস্ব মেধা ও শ্রম দিয়ে।
আমরা এই দুই নারীর জন্য গর্ববোধ করি, শুভেচ্ছা জানাই।
—————————————