নিজস্ব প্রতিনিধি,
গ্লোবাল নিউজ, কলকাতা
17th,Dec’23, Saturday.
কাজী নজরুলের উপরে সঙ্গীত ও কবিতা / ঋদেনদিক মিত্রো
সঙ্গীত : তুমি নজরুল তুমি নজরুল
——————————-
গীতিকার : ঋদেনদিক মিত্রো ( ভারত)
তুমি নজরুল, তুমি নজরুল,
কোন্ তুলনায় তোমাকে বাঁধি,
শুধু নির্জনে তোমাকে ভাবি,
বাঙালী জাতীর হৃদয়ের বুলবুল,
তুমি নজরুল, তুমি নজরুল।।
তুমি লিখেছিলে “বিদ্রোহী” কবিতা,
আজো জেগে ওঠে অগ্নিযুগের ছবিটা,
কত সঙ্গীত, নাটক, কবিতা, গদ্য,
লিখে গেছ তুমি অবিরল অনবদ্য,
বদলে দিয়েছ চিন্তা মননে কত ধারা বিলকুল,
তুমি নজরুল, তুমি নজরুল।।
কারাগারে লিখেছিলে সঙ্গীত সে কী উদ্দিপিত,
“কারার ঐ লৌহ কপাট” আজো করে জাগরিত।
কত দিন আর লিখেছিলে কবি, মাত্র কুড়ি বছর,
তার মধ্যেই সাজিয়ে দিয়েছ তোমার প্রতিভা মোহর।
সুরে ছিলতো তুমি এক মহা সম্রাট,
বিশ্ব কবির থেকে বহুদূরে নতুন সুরের জাত,
আবৃত্তিতেও রাজার কন্ঠে দুর্বার,
সব বাধাকেই করতে শেখালে চুরমার,
বাংলাদেশের জাতীয় কবি হয়ে রবি সমতুল,
তুমি নজরুল, তুমি নজরুল।।
————————————
( ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩, রাত্রি ২১:২৩)
কবিতা : কাজী নজরুল ইসলাম, কারার ঐ লৌহ কপাট
—————————
ঋদেনদিক মিত্রো
[ নিচে কবিতা। আগে এই কবিতা লেখার কারণ বলি। “কারার ঐ লৌহ কপাট” — সঙ্গীতকে সুরের বদল করে নিয়ে মুম্বাইতে একটি চলচ্চিত্রে দেওয়া হয়। সেটার বিরুদ্ধে আন্দোলনকে সমর্থন করে লেখা। “যাত্রাপালা” = A One wall theatre travels and performs performing different stories with actings on the stage by musical supports.
এই কবিতায় চিত্রকল্প দেওয়া গেলো না। কারণ, এর frame of line আলাদা। তাই, চিত্রকল্প দিলে এর আদল উল্টে যাবে।
আর একটা কথা, কাজী নজরুল ইসলামকে এখানে বিশ্ব প্রান কাঁপানো কবি ও গীতিকার, সুরকার বলা হয়েছে, কারণ তিনি একটি রাষ্ট্রের জাতীয় কবি, পরাধীন ভারতের সব চেয়ে জনপ্রিয় বিপ্লবী কবি ও সংগীত স্রষ্টা ও সুরকার। সেই হিসেবেও তিনি আন্তর্জাতিক, তিনি এশিয়ার প্রথম নোবেল জয়ী বিশ্ব কবি তথা ভারতের জাতীয় কবি রবিঠাকুরের পাশে বসেছেন স্বাধীন বাংলাদেশে, এবং মাত্র কুড়ি বছর লেখার জীবনে কয়েক হাজার গান ও কবিতা লিখেছেন বিচিত্র পরিকাঠামোয়। ইংরেজি ভাষায় জন্মালে তিনি নোবেল প্রাইজ পেতেন সরাসরি, নোবেল পুরস্কারের বিচার পদ্ধতির ইতিহাস সেটাই বলে। বাংলা থেকে অনুবাদ হয়ে হয়তো তিনি নোবেল পেতেন, কিন্তু মাত্র ৪২ বছর বয়সে বোবা হয়ে গেলেন। শুনেছি ভুল পদ্ধতিতে তিনি যোগসাধনা করার জন্যই এই ঘটনা ঘটে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলায় চুরুলিয়া গ্রামে 1899, 24 May জন্মালেও ১৯৭১ সালে পুর্ব পাকিস্তান রাজ্য স্বাধীন বাংলাদেশ হবার পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারত সরকারের সাথে আলোচনা করে কবিকে ১৯৭২ সালে কলকাতা থেকে বাংলাদেশে ঢাকাতে নিয়ে যান। সেখানে তিনি বাকি জীবন কাটান। ১৯৪২ সাল থেকে ১৯৭৬ সাল অবধি তিনি স্নায়বিক দুর্বলতায় ভোগেন, ও তারপর ৩৪ বছর ধরে সৃষ্টির কাজ করতে পারেন নি। বাংলাদেশে রবিঠাকুরের নামের পাশে যুগ্ম জাতীয় কবি হিসেবে সম্মান দেওয়া হয়। ভারতে তিনি পান পদ্মভূষণ ও জগত্তারন পদক। এত বিপন্নতার পরেও ঠিক মত পদ্ধতি রক্ষা করা সম্ভব হলে হয় তো তিনি পেতেন নোবেল পুরস্কার, বাংলাদেশ থেকেই। কিন্তু, বাংলাদেশ তখন অভাবে দিশাহারা হয়েছিল স্বাধীনতা যুদ্ধ করে। তারপর স্বাধীনতা পেয়ে টিকে থাকার যুদ্ধ করেছে বাংলাদেশ। পরপর একের পর এক বিপদ ও বিপন্নতায় চলছিল দেশ। তাই হয় তো নজরুলকে নোবেল পুরস্কার পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু, তিনি বিশ্বের সেরা বিষ্ময়কর স্রষ্টাদের মধ্যে একজন। শেষ নিঃশ্বাস : ২৯ আগষ্ট, বাংলাদেশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মান সূচক D. Lit, ৯ ডিসেম্বর ১৯৭৪। ১৯৭৬ সালে আইন অনুযায়ী জানুয়ারী মাসে বাংলাদেশ সরকার কবিকে বাংলাদেশ এর নাগরিকত্ব দান করে। ঐ বছর ২১ ফেব্রুয়ারীতে কবিকে দেওয়া হয় বাংলাদেশ এর সেরা সম্মান “একুশে পদক”। তাঁকে বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষনা করা হয় ১৯৭৪ সালে। তিনি ছিলেন কবি, উপন্যাসিক, গীতিকার, সুরকার, যন্ত্রশিল্পী, সঙ্গীত নির্দেশক, দার্শনিক, বাচিক শিল্পি, সমাজ দরদী, জাতভেদ ও ধর্মের বিভাজনের উর্ধে বিশ্ব প্রেমি। এছাড়াও বহু বিষয়ে জ্ঞান। প্রতিদিন সকালে ইংরেজি দৈনিক “The Statesman” পড়ে অন্য কাজ করতেন। তাঁর পারিবারিক ধারাও বিবিধ সৃষ্টিশীলতার পরিকাঠামোয় উচ্চ স্তরে চলমান।
A Bengali poem like “Kazi Nazrul Islam, Karar Oi Louha Kapat”, by Ridendick Mitro, India ]
————————————-
কাজী নজরুল ইসলাম, কারার ঐ লৌহ কপাট
———————————–
ঋদেনদিক মিত্রো ( ভারত)
“দুখু মিঞা” থেকে “কাজী নজরুল”,
তারপর ঝড় আম্ফান,
যাত্রাপালার সেই “দুখু মিঞা” —
কাঁপালো বিশ্ব প্রান, —
জাগালো বাঙলা, জাগালো ভারত,
শিশু থেকে পিতা, মাতা,
কোনোও খেতাবে, পুরস্কারে —
তাকে তো যায় না মাপা।
উনিশশো সতের সাল ছিল সেটা,
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ,
হাবিলদারের চাকরিটা নিয়ে
সাহসেতে উদ্বুদ্ধ —
কিকরে সকল বাধা ভাঙা চাই–
কাপুরুষতাকে সরিয়ে —
এই অনুভূতি মনের ভিতর —
আবেগেতে দেয় ভরিয়ে —
তারপর ফিরে কিছু দিন পরে —
কলকাতা মৌলালিতে —
একটি ঘরের ছাদের রৌদ্রে —
বসে দিল কিছু লিখে —
তখন ছেলেটি একুশ পেরিয়ে
সদ্য তরুন যুবক,
সেই লেখাটাই ছিল “বিদ্রোহী” —
কবিতা জগতে চমক।
নিচের তলায় ছিল বন্ধু —
মুজাফফর আহমেদ,
তাকে দেখাতেই সে তো অবাক,
কবিতাটা এত নির্মেদ —
সাহসী চিন্তা এবং মননে —
আবেগে সঞ্চারিত,
সেই কবিতায় রাতারাতি খ্যাতি —
যেই হোলো প্রকাশিত।
তারপর কত কবিতা ও গান,
কত পদে অলংকৃত,
এইচ এম ভি ও আকাশবাণীতে —
উচ্চ পদেই স্থিত,
ভারতবর্ষ ভাগ হলো যেই
স্বাধীন হবার পরে,
বাংলার আর্ধেক চলে গেলো
পাকিস্তানের ঘরে,
পূর্ব পাকিস্তান সে-অংশ,
পরে তা বাংলাদেশ,
যে-স্বাধীনতা পেতেই তিরিশ
লক্ষ মানুষ শেষ।
তিরিশ লক্ষ প্রাণ মারা গেল —
মুক্তি যুদ্ধ করে,
উনিশ শত একাত্তরের —
সেই ইতিহাস গড়ে —
বিশ্বে প্রথম বাংলাভাষার —
স্বাধীন দেশের মাটি,
বাংলাভাষা পেলো স্বাধীনতা,
সঙ্গে বাঙালী জাতি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমান সেই নায়ক,
কোটি-কোটি শিশু, নরনারী মিলে
আনে মুক্তির পথ,
রাষ্ট্রসংঘ চমকিয়ে গেলো–
এই কি বাঙ্গালী জাতি,
কোনো বাধাকেই ভাবে না তো বাধা,
লাখ-লাখ ঝড়ো পাখি।
তারপর স্বাধীনতার পরেই –
বাংলাদেশের নামে–
রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল —
জাতীয় কবির স্থানে —
যোগ হয়ে গেলো এই দুটি নাম,
নতুন আলোর উন্মেষ,
এর নাম হলো সারা পৃথিবীতে —
স্বাধীন বাংলাদেশ।
সেই নজরুল ব্রিটিশ যুগেই
কারাগারে বসে লিখেছেন,
যে-সঙ্গীত তাকে বিকৃতি?
কারা অধিকার দিয়েছেন।
সেই লেখা, সুরে আমরা জেগেছি,
হয়েছি মুক্ত জেদি,
কারার ঐ লোহ কপাট,
ভেঙে ফেল কররে লোপাট,
রক্ত জমাট শিকল পুজার পাষাণ বেদী।
—————————————
( রচনা : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩)
—————————————
বিঃদ্রঃ — কবিতাটিতে কাজী নজরুলকে “তুমি” ও “আপনি” দুটো সম্বোধন করা হয়েছে তাঁর জীবনের নানা পর্যায় তুলনা করে। এটা সজ্ঞানে করা হয়েছে। পাঠক বুঝে নেবেন। তবু আইনত জানিয়ে দিলাম।
—————————————-
ঋদেনদিক মিত্রো ( Ridendick Mitro)
পেশায় ইংরেজি ও বাংলাভাষায় কবি-উপন্যাসিক-গীতিকার-কলামিষ্ট। কলকাতা, ভারত।
—————————————-
বিশেষ সংযোজন
——————————-
“কাজী নজরুল ইসলাম, কারার ঐ লৌহ কপাট”, — কবিতাটি লিখেছি ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩, একটি সংবাদ দেখে। মুর্শিদাবাদ জেলার একটি পরিচিত পত্রিকা আছে “নবারুন”, প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ আহসান আলী। ইনি কবি ও সংস্কার মুক্ত সমাজ সংস্কারক ও সমাজসেবি। এঁদের পারিবারিক ধারা — কেউ ইংরেজি ভাষায় ও বাংলা ভাষায় কবি, কেউ শিক্ষক, কেউ থিয়েটার করেন, কেউ সিনেমার নায়ক। এই পরিবারের শীষ মোহাম্মদ হলেন এই পত্রিকার সম্পাদক, পিতার মৃত্যুর পরে, এবং সমাজ সংস্কারক। ইনি “নবারুন” মুদ্রিত পত্রিকা সম্পাদনা করেন, নওদা বইমেলার একজন মূখ্য ব্যাক্তি। এবং বিবিধ ধর্ম নিয়ে উৎসব করেন। বিবিধ ধর্মের উপরে প্রচুর পড়াশুনা। ইনি ২০১৭ সাল থেকে “Potrika Nabarun” নাম দিয়ে একটি হোয়াটসাপ গ্রুপ পত্রিকা চালান। এতে ভারত ও বাংলাদেশ নিয়ে অনেক সদস্য আছেন, তারা এখানে তাঁদের নানা কাজ পাঠান। সেখানে একটি সংবাদ মাধ্যমের পোষ্ট দেখলাম। ভারতের বর্ধমানের চুরুলিয়া থেকে সংবাদ করেছেন, সাংবাদিক লুতুব আলী। তারিখ ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, “Bengal News Times”. তাতে প্রকাশিত সংবাদের সংক্ষেপ এটাই —- “দোলনচাঁপা নজরুল ফাউন্ডেশন ” এর পক্ষ থেকে “কবি তীর্থ চুরুলিয়া”তে একটি বড় সভা হয়। মুম্বাইর একটি বানিজ্যিক হিন্দি সিনেমায় কাজী নজরুল ইসলাম এর একটি দেশাত্মবোধক সঙ্গীত “কারার ঐ লৌহ কপাট”-কে সুর বদল করে ব্যাবহার করা হয়েছে। সেই প্রতিবাদ উপলক্ষে হয় একটি প্রসারিত কবি সভা। নেতৃত্ব দেন কবির পরিবারের থেকে কবির ভ্রাতুষ্পুত্র কাজী রেজাউল করিম, কবির নাতনি তথা এই ফাউন্ডেশন এর কর্ণধার বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী “সোনালী কাজী”। “সূর্য সেন” এর চতুর্থ বংশধর “শেলী সেনগুপ্ত” বাংলাদেশ এর ঢাকা থেকে এসেছিলেন। ত্রিপুরার ভূমিকন্যা বিশিষ্ট কবি “জবা পাল দত্ত”, মেঠো কবি “অচিন্ত মন্ডল”, ত্রিপুরা থেকে “ভারত বাংলাদেশ মৈত্রেয়ী সংসদ” এর কর্ণধার “দেবাশিষ দেব রায়”, ও দেশ বিদেশ থেকে শতাধিক কবি সাহিত্যিক ও গুণীজন। “দোলনচাঁপা নজরুল ফাউন্ডেশন ” এর পক্ষ থেকে গুণীজন সংবর্ধনা ও কবি সভা হয়। “ভোরের আলো” সাহিত্য পত্রিকার শারদীয় সংখ্যা প্রকাশিত হয়। স্বরচিত কবিতায় প্রথম স্থান পান কবি “জলধর ঘোষ”, যুগ্মভাবে দ্বিতীয় হন “সুচন্দ্রিতা ঘোষাল চক্রবর্তী” ও ” মৃনাল কান্তি পন্ডিত”, তৃতীয় স্থান পান “সুস্মিতা দেবনাথ”। মেঠো কবির সম্মানণা দেওয়া হয় “অচিন্ত কুমার মন্ডল”কে।
——
এই সংবাদ পেলাম, Potrika Nabarun -এ লিংক পোষ্ট করেন ” সোনালী কাজী” নিজেই।
সেটা দেখে ভাবলাম, তাহলে এই আন্দোলন ব্যাপ্ত আকারে চলছে। আমি তাতে মুগ্ধ হই। তখন সাথে-সাথে লিখতে থাকি এই কবিতা।
———————————–
অসাধারণ অনবদ্য রচনা,ধিক্কার জানাই সেই সমস্ত মানুষের প্রতি যারা স্রস্টার সৃষ্টি কে বিকৃত করে ।
আপনার কলম আরো বলিষ্ঠভাবে গড়ে উঠুক,এই কামনা করি 🙏🙏