Special Correspondent,
Global Newz, Kolkata
30thNovember’23, Thursday
কবিতা – মাইকেল মধুসূদন দত্ত
[ A Bengali Poem on Michael Madhusudan Dutt ( 1824-1873 ), including an English sonnet on him. He was an unbelievable quality Indian Epic poet and playwright, Journalist, educator and barrister. some years stayed in London, Paris and Versai: Written by Ridendick Mitro, India. 339 lines poem.
গদ্যটা পড়ে সবার নিচে কবিতায় যান, ভালোলাগবে। খুব নরম করে লেখা পুরো কবিতা। শিশু থেকে অভিভাবকগন, সবাই সহজেই পড়ে অনুভব করবেন মাইকেল মধুসূদন দত্তকে। এই বাংলা কবিতাটা ৭ দিন মতো খেটেছি, এর সাথে ইংরেজি সনেট সহ। যদিওবা এর প্রাথমিক রূপ প্রায় ১০০ লাইন আগে লেখা ছিল, ২০২৩ সালের প্রথমের দিকে। সম্প্রতি সেটার প্রায় পুরোটাই বাদ দিয়ে নতুন করে লিখেছি। এই দীর্ঘ বাংলা কবিতার উপরে দেওয়া ইংরেজি সনেটটা লিখেছি এই বাংলা লেখার পাশাপাশি সময়ে। লেখাটার সাথে এই Decoration দরকার ছিল। তবে মাইকেল মধুসূদন দত্তকে নিয়ে আমার একাধিক বাংলা ও ইংরেজি সনেট ছিল। এখানে সাম্প্রতিক লেখা ইংরেজি সনেটটি লিখে তৃপ্তি পেয়েছি। পাঠকের ভালোলাগলে শ্রম সার্থক। দু তিন দিন ধরে সনেটটাকে খুঁটিনাটি নিখুঁত করেছি, বাংলা কবিতাটাকে রন্ধ্রে-রন্ধে পর্যবেক্ষণ করেছি। চেষ্টা করেছি সব দিক সুন্দর করে তুলে ধরতে। তবে আমার লেখা আমার দুটি চোখে দেখা ও পর্যবেক্ষণ করা, এরপর পাঠকের হাজার-হাজার চোখে এর বিচার হয়।
আগে ফাইলটা পুরো দেখে নিন নিচ অবধি। তারপর গভীর ভাব নিয়ে পড়তে শুরু করুন। পছন্দ বা অপছন্দ পরে, আগে পাঠক হিসেবে পড়ে যান।
শুরুতে দেওয়া ইংরেজি সনেটের ১৪ পংক্তি দীর্ঘ বাংলা কবিতার মধ্যে পংক্তি হিসেবে ধরা হয় নি। কিন্তু, এই দীর্ঘ বাংলা কবিতার মুখপাত্র এই ইংরেজি সনেট লিখে দিলাম। কখোনো পাঠসূচিতে এই বাংলা কবিতা ঢুকলেও এই ইংরেজি সনেট আবশ্যিক হিসেবে এই স্থানে রাখলে মাইকেল মধুসূদন দত্তকে নিয়ে পড়তে আরো ভাব গভীরতা আসবে। এটি শুধু মাইকেলের প্রতি অনুভূতি তৈরির আবহাওয়া তৈরিতে রাখা হয়েছে। যে-হেতু তিনি ইংরেজী ভাষাতেও বাংলার মতো সম দক্ষ কবি ও লেখক ছিলেন। এবং ইংরেজি সহ গ্রীক, ল্যাটিন, হিব্রু, ইতালি, জার্মান, ফরাসি, তামিল, তেলেগু, ফারসি ও সংস্কৃত, প্রতিটা ভাষা দক্ষতার সাথে জানতেন।
মাইকেল মধুসূদন দত্তকে জানলে আমাদের মেধা, আত্মবিশ্বাস, জ্ঞানচর্চা, আন্তর্জাতিক আচরনের ভাবনা বা সতর্কতা বাড়ে।
পারিবারিক অভ্যেসের ধারায় বা সঠিক নিয়মে তাঁকে সতর্ক না করার কারণে তাঁর অপব্যায় করার প্রবনতা ও নেশা সেবনের অভ্যেস এসেছিল। এই দুটি নিয়ে আমরা সতর্ক হলে বাকি গুণগুলি আমাদের জীবনে ও মানব সভ্যতায় জরুরি। চমকপ্রদ তাঁর জীবন নিয়ে এই কবিতা। এই কবিতা পড়ে বুঝবেন, কত ভুল ব্যাখ্যা ও সংক্ষিপ্ত জ্ঞান নিয়ে আমরা বিচার করতাম মাইকেল মধুসূদন দত্তকে।
তিনি ইংরেজি না পেরে বাংলায় আসেন নি। ইংরেজির পাশে বাংলা লেখা শুরু করেছিলেন। ইংরেজিতে কবিতা, প্রবন্ধ লেখা ও অনেকগুলি ইংরেজি পত্রিকায় সাংবাদিকতা করে প্রচুর অর্থ আয় করেছেন।
খৃিষ্টান হবার কিছুদিন পরে মাইকেল মাদ্রাজে গিয়ে শিক্ষকতা ও সাংবাদিকতা করে ও ইংরেজি কবিতার বই লিখে টাকা নিয়ে বিদেশ গেছেন। বিভিন্ন দেশ ঘুরেছেন। এবং তিনি তজ্য হবার পরে নিজের পুরানো পাঠ্য বইগুলি একসাথে গুছিয়ে বিক্রি করে সেই টাকায় কোনো রকমভাবে মাদ্রাজ গিয়ে শিক্ষকতা ও সাংবাদিকতায় যোগ দেন। এবং নিজের যোগ্যতা ও শ্রমে অর্থনৈতিকভাবে অস্তিত্ব তৈরি করেন।
যারা বলে যে, মাইকেল তাঁর বাপের খেয়ে ও বিদ্যাসাগরের দান নিয়ে কবিতা লিখে গেছেন, তাঁদেরকে বলি, বাপের সম্পদ ছেড়ে তিনি সাহিত্য করে প্রচুর ধন উপার্জন করেছেন। নিজের সংসার চালিয়েছেন। বিদেশ ঘুরেছেন। বিশ্বজয় করেছেন। ব্যারিস্টারিও পড়েছেন। একটা সময়, তিনি পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দান নিয়েছিলেন। কারণ, মাইকেল তাঁর সব টাকা অন্যদেরকে দান করে ভিখারী হয়েছিলেন বলে। ভিখারী শব্দটি এখানে বেমানান, কারণ ভিক্ষা তাঁর পেশা ছিলনা। তিনি কপর্দকশূন্য হয়ে পড়েন। অনেক ধান্দাবাজ তাঁর মতো উদাস মানুষদের থেকে নানা অছিলায় টাকা চেয়ে ভিখারী বানিয়ে দিত। তিনি নিজেও হিসেব করে খরচ করতেন না। তাই তিনি বিদ্যাসাগরের থেকে টাকা নিয়েছিলেন কিছুদিন, কবিতা লিখে কপর্দকশূন্য হওয়ার জন্য নয়। কবিতা লিখে ভিখারী হননি। তা ছাড়া পৃথিবীর সব মহৎ কাজের জন্য পৃথিবীর সব সম্পদ খরচ করা বৈধ। সেটা যে-সূত্র থেকেই আসুক। তুচ্ছ বা অন্য কোনো কাজের জন্য কেউ কাউকে টাকা বা সম্পদ দান করলে সেটাকে সম্মান দেওয়া হয়, সেই গ্রাহককে কলঙ্কিত করা হয় না, কিন্তু, কোনো কবি বা সাহিত্যিকের বিপ্ননতায় কেউ টাকা বা অন্য সম্পদ দিয়ে সহায়তা করলে তখন সেই কবি বা সাহিত্যিককে লজ্জার জীবন বলে চিহ্নিত করা হয়। এই সামাজিক ব্যাবস্থা কতোটা বিসদৃশ চিন্তায় আচ্ছন্ন। মানে, জ্ঞান চর্চার মানুষদের যত রকমভাবে বিপন্ন করে ঠেসে ধরা যায় সেটাই করতে চায় এই সমাজের পরিবার প্রথার স্বভাবের অবস্থান। এবং জ্ঞান চর্চা করা মানুষদেরকে এমন আচরণ করা হয় যে তাদের বিবিধ বিপন্নতায় ঢুকিয়ে দিয়ে তারপর তাদের বিপন্নতাকে প্রকাশ্যে দেখিয়ে এমন অবস্থা তৈরি করার চেষ্টা করা হয় যাতে বাকি সমাজের লোকেরা যেন জ্ঞান চর্চা করতে ভয় পায়। কী ছক দেখেছেন?
আচ্ছা, কেউ যদি বাপের খেয়ে কবিতা লিখে জীবন কাটায় তাতে কার বাপের কী হয়েছে? বাপের টাকা নিয়ে কুনেশার আড্ডা করলে তো কেউ ধিক্কার দেয় না। বাপের টাকায় কেউ কাউকে উপহার দিলে বা খাওয়ালে সে ধিক্কার পায় না — বরং প্রসংসা পায়। বাপের টাকায় কেউ গাড়ি, বাড়ি, গহনা, কিনলে সেজন্য তো কেউ বিদ্রুপ করে না। বাপের টাকায় কেউ মামলা করলে তো ধিক্কার দেয় না। বাপের টাকায় কেউ মস্তানি করে বেড়ালে তো ধিক্কার দেয় না। বাপের টাকায় বাড়ির ছাদের উপরে অনুষ্ঠান করে খাওয়ালে তো কেউ অবাস্তব বা অপদার্থতা হিসেবে বিচার করে ধিক্কার দেয় না। বাপের টাকা বা বাপের সম্পত্তি নিয়ে কেউ অপ্রয়োজন দান করলেও তাকে ” বাপের সম্পদ দান করে দাতা সাজছে ” এটা বলে ধিক্কার না দিয়ে সম্মান দেয়।
প্রয়োজনের ক্ষেত্রে ত্যাগ স্বীকার করা ধন্যবাদের যোগ্য, সেটা নিজের বা বাপের যার টাকাতেই হোক। এটা মানি। কিন্তু সেটাও ধন্যবাদ পায়। পাক। কিন্তু, বাপের টাকায় খেয়ে কেউ জ্ঞান চর্চা করলে, সাহিত্য সৃষ্টি করলেই নিকট পরিচিতরা ধিক্কার দেয়। অপরিচিতরাও সেটা করে। কোন অশিক্ষিত মাপের বুদ্ধির চর্চার সমাজে আমরা বাস করছি।
মাইকেলের ইংরেজি জ্ঞান ও তাতে লেখার দক্ষতা কতটা উন্নত ছিল যে, তাঁকে নিয়ে সাহেবদের প্রিয় পত্রিকায়গুলোর ব্যাবসা হতো।এগুলি কি আমরা জানিতাম?
কবি মানে দরিদ্র হয়, এইসব ভুল ব্যাখ্যা তারাই রটায় যারা জ্ঞান চর্চাকে ভয় পায়, নিম্ন মানের নাগরিক হতে চেয়ে সেই পথে ধাবিত হয়। এটা আমার কথা নয়, যুক্তি বলছে।
দারিদ্র আসে দূর্ঘটনা বা অপব্যায়ের জন্য বা কোনো গোঁয়ার্তুমির জন্য, বা অন্য কোনো পথে, তবে কবিতা লিখে নয়। কবি মানে ভিখারি হলে তো দুনিয়ার সব ভিখারী কবি হোতো।
এক শ্রেনীর দায়িত্বজ্ঞানহীন শিক্ষক তাঁদের ছাত্রছাত্রীদের শেখান যে মাইকেল মধুসূদন দত্ত ইংরেজি না পেরে বাংলা ভাষায় চলে আসেন। তাই বিদেশী ভাষা চর্চা করে সাহিত্য লেখা আমাদের ঠিক নয়। এই সব শিক্ষকগন কী করে শিক্ষকতা করেন, জানিনা। আমি ইংরেজিতে লেখার কারণে, বিশেষ একটু মুহুর্তে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র সাহিত্যের এক অধ্যাপক, তিনি অনেক বছর আগেই অবসরপ্রাপ্ত, ২০১৩ সালে একটি দিনে, কলকাতা Academy of fine arts চত্তরে এক সভায় দর্শকাসনে বসে আমাকে প্রশ্ন করেন, ” তুমি ইংরেজিতে লিখছো কেন? ” আমি বললাম, ” আমি মানুষ, পৃথিবীর সব ভাষা আমার মাতৃভাষা। যেটা শিখেছি সেটায় সাহিত্য করি। দুটি ভাষাতে সাহিত্য করি, অনুবাদ নয়, মৌলিকভাবে। বাংলা শিখেছি, বাংলাতেও করি।”
বাংলাভাষায় অনেক কিছু কারণে অনেক সুন্দর দিক আছে। কিন্ত, নিজের কথ্য ভাষা নিয়ে কোনো একমুখিতা আমাদের উচিত নয়। এটাই বলতে চাই।
উনি আমার উত্তরে চমকে উঠে বিষ্ময়কর চোখ দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে নীরব হয়ে গেলেন। অবাক হলাম, তখনি তাঁর বয়স প্রায় নব্বই, মানে রবিঠাকুরের বেঁচে থাকার সময় তিনি কিশোর বা যুবক। এবং রবিঠাকুরের সাহিত্য তিনি পড়াতেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এবং রবিঠাকুর নিজের লেখা ইংরেজি অনুবাদ করেই বিশ্বের বিচারকদের কাছে আসেন। নইলে আমরা তাঁকে চিনতাম না। অথচ ওই ঋষিতুল্য অধ্যাপক এই সত্যকে জেনেও ” মাতৃভাষা ” শব্দটি নিয়ে আত্নকেন্দ্রিক আবেগে মগ্ন ছিলেন। তাঁর এই সীমাবদ্ধ চিন্তায় আমি অবাক হয়েছিলাম, যেমনটা আমার আন্তর্জাতিক যুক্তিতে তিনি অবাক হয়েছিলেন। তিনি বিরাট জ্ঞানী বলেই এত বড় শিক্ষকতার দায়িত্ব কৃতিত্বের সাথে সামলেছিলেন। এমন কী, তাঁর ঋষিতুল্য চেহারা, অভিব্যাক্তি দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। এঁদের সংস্পর্শে একটা অসৎ মানুষ অনেকটা বদলে যেতে পারে, অজ্ঞ মানুষ পরপর জ্ঞানের দিকে আসতে পারে। তাঁর শরীরে এইজাতিয় এত power আমি অনুভব করেছিলাম। সেই অনুভূতি আমার মনে আছে এখনো। কিন্তু, চিন্তায়, বিশ্বাসে খুব ঘর গেরস্থ কেন। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম তাঁর এই চিন্তার জন্য। এগুলি তাঁর ভুল নয়, আমাদের সামাজিক বিশ্বাসের ভুল। তবে এই চিন্তায় পার্থক্য থাকলেও তাঁর স্পর্শ আমাকে রোমাঞ্চিত করেছিল। তাঁর এক পা সক্রিয়তা অনেকদিন হারিয়েছিল, তাই লাঠি নিয়ে, বা এইরকম একটা সহায়ক নিয়ে এই অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। চেয়ারে বসতে নয়। অনুষ্ঠানকে উপভোগ করতে। ঐ রকম শারীরিক অসুবিধে নিয়ে তিনি হাঁটছিলেন, শরীরে কত তেজ, যোদ্ধার মতো।
চিন্তায় আন্তর্জাতিক হবার ক্ষেত্রে উপরিউক্ত বিশ্বাসগুলি নিয়ে শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের নানা ক্ষেত্রে খুব সংবেদশীল ও আধুনিক হতে হবে। কারণ, তাঁরাই তো সভ্যতাকে করবেন বিশ্বজনীন, আর কেউ নয়। তাঁদের উপরে তো পৃথিবীতে কোনো পদ নেই। তাঁদের পদমর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই মাইকেল মধুসূদন দত্তের উপরে কবিতাটি সবাইকে উপহার দিচ্ছি। কারণ, মাইকেল মধুসূদন দত্ত ছিলেন একজন দায়িত্বশীল শিক্ষিক। মাদ্রাজে অতি সুনামের সাথে পেশায় শিক্ষকতা করেছিলেন কয়েক বছর। একই সাথে করেছিলেন পেশায় সাংবাদিকতা। ]
🌲🥇🌲
কবিতা : মাইকেল মধুসূদন দত্ত
—————————————
ঋদেনদিক মিত্রো ( ভারত)
The days have gone also have been unknown,
The charms of you still keep overwhelming,
That range of power has been strongly alone –
In the eyes of us shows like enchanting.
You are it Michael Madhusudan Dutt,
A sophistication of works and fight,
A mervellous desperateness is brought –
In accordiance with a course, delight.
Life’s dedicated to dreams and knowledge,
Along with the open heart for earth’s way,
Those examples are truly assemblages —
in respect of your memory each day.
Over the world a prince of versatile,
We cry seeing tears and fire in your smile.
[ A Sonnet to Epic Poet Michael Madhusudan Dutt
by Ridendick Mitro, India. Sonnet design : Shakespearean. ]
[ ১ ]
কবিতা লিখেই মাইকেল কেনো দরিদ্র,
অপব্যায়ের ফলে অভাব করে বিদ্ধ।
মানুষ গরিব — দুর্ঘটনা বা অপব্যায়ে,
কবি হলে গরিব হয় কোন্ যুক্তির দায়ে।
জ্ঞানের পথে বাঁচাকে ছোট করার ধারা,
এসব ফন্দি করে, যারা ছোটলোকের চারা।
কেউবা বলেন ইংরেজীতে বিফলতার জন্য,
বাংলাভাষায় ফিরে এসে মাইকেল হন ধন্য।
এসব গল্প কথা কাদের দ্বারা প্রচারিত,
বিফলতার গল্পগুলো তাঁদের উদ্ভাবিত।
বাংলাভাষায় আধুনিক রূপ দেবার প্রয়োজনে,
ইংরেজীর সাথে আসেন বাংলায় লেখনে।
মাইকেল কে, কেমন তিনি, শোনো এখন তবে,
জানার পরে সত্যি তুমি কেমন অবাক হবে।
শ্রদ্ধার নামে ছোট করে জ্ঞাণীকে কেউ বলে,
গুণীর পেটে ভাত নেই, হায়, মঙ্গল্যে, মঙ্গল্যে।
এরাই গুণীর থেকে সকল সুযোগ চুরি করে,
ভিখারীর তকমা দিয়ে দুমড়ে চেপে ধরে।
এদের বংশধররা আবার এদের মতন হয়,
শিক্ষা, ডিগ্রি নিয়েও এদের বিকট পরিচয়।
জ্ঞানের পথেই সভ্যতার শুরু ও বিকাশ,
জ্ঞানের পথেই শিক্ষা দীক্ষা, সময়, ইতিহাস।
সাহিত্য, শিল্প, ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান, অঙ্ক,
সবই তো জ্ঞান, জ্ঞানী হওয়াই শ্রেষ্ঠ চরিত্র।
সীমার জ্ঞান নিয়ে তুমি সহজে হও ধনী,
অসীম জ্ঞানী হলে পাবে বিশ্ব লোকের জমি।
কোন্ পাওয়াটা তোমার কাছে বড়, সেটা নেবে,
সেই রকমই সম্মানটা তোমায় জগৎ দেবে।
সবাই হবে চরম জ্ঞানী এমন বলি না তো,
বিচার বোধ স্বচ্ছ হলেই তুমি উচ্চ জাতো।
সেটাই যদি স্বচ্ছ হয়, বলবে না আর মোটে —
কবিতা লিখে দরিদ্র হয় মানুষ এ-জগতে।
[ ২ ]
আজ একজন বিরাট জ্ঞানী নিয়ে আলোচনা,
সভ্যতাকে করেন নতুন রূপে স্থাপনা।
বিদেশীয় অনেক ভাষায় যেমনই বিষ্ময়,
বাংলাতেও তিনি করেন নতুন দিগবিজয়।
তিনি না আসলে, হতেন না রবিঠাকুর,
আসতো না তো পরেপরে নতুন স্বর ও সুর।
মেধা, সাহস, পরিশ্রম ও স্বপ্ন দেখার মাপ,
কত উচ্চ হতে পারে সেই সিড়িটার ধাপ।
কিভাবে সেই সুদীর্ঘতা করবো অতিক্রম,
যে-ছেলেটি সত্যিই সেই বিরল উদাহারণ,
তিনি কে, না বলতে পারলে, শিক্ষা নিরর্থ,
তিনি আমাদের কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
তাঁর জন্ম ১৮২৪-এ ২৫শে জানুয়ারী,
বর্তমান বাংলাদেশ, যশোর, সাগরদাঁড়ি,
কপোতাক্ষ নদের তীরে সাগরদাঁড়ি গ্রামে,
জমিদার পরিবারে তাঁর জন্ম ধনে মানে।
কার জন্ম, নাম কী, তিনি মধুসূদন দত্ত,
ইংরেজী ও বাংলা কাব্যে রাজ রাজত্ব।
পিতা রাজনারায়ণ, আর মাতা জাহ্নবী,
তাঁদের ছেলে ভারত বিশ্বখ্যাত, মধু কবি।
পিতা ছিলেন বড় উকিল, কলিকাতায় বাসা,
সাত বছর হতে মধুর কলিকাতায় আসা।
পরে-পরে বলছি সব কাহিনী ধারায়,
যাঁরই হাতে বাঙালা ভাষা নতুন প্রান পায়।
২৯শে জুন আঠেরোশো তিয়াত্তর সাল,
মৃত্যু, আলিপুর, কলকাতায় এক জেনারেল হাসপাতাল।
তিনি মহাকবি মাইকেল মধুসুদন দত্ত,
কবিতা ও নাটকে যাঁর — রাজার বীরত্ব।
সাগরদাঁড়ি পাঠশালায় প্রথম পড়া ধরা,
কলিকাতায় চলে এসে উঁচু ক্লাসে পড়া।
বাল্য মধু খিদিরপুর স্কুলে কলিকাতায়–
ভর্তি হয়ে এখানেই তো দুবছর পড়াশুনায়।
তারপর হিন্দু কলেজে, আজকে প্রেসিডেন্সি,
কলেজ থেকে অনেক পরে আজ যা University.
আঠেরোশো তেত্রিশ — হিন্দু কলেজে ভর্তি,
বাংলা, ইংরেজি ও ফারসিতে নিলেন বুৎপত্তি।
কলেজে তো নিয়মিত তিনি পেতেন বৃত্তি,
এখান থেকে দেখাতে শুরু জ্ঞানের নানা কীর্তি।
“নারী শিক্ষা” প্রবন্ধ লিখে ও পড়ে নাম,
তাই হিন্দু কলেজে তো স্বর্ণপদক পান।
আঠেরোশো চৌত্রিশ, এই কলেজে যখন–
পুরস্কার বিতরণী, চমক দিলেন তখন।
” নাট্য বিষয়ক প্রস্তাব ” ইংরেজি পাঠে,
চমকে দিলেন দর্শকদের উচ্চারণের জাতে।
আঠেরোশো তেতাল্লিশ নয়-ই ফেব্রুয়ারী,
খৃষ্ট ধর্ম গ্রহণ করে দোষ করলেন ভারি।
হিন্দু কলেজ থেকে তাই বের করে দেয় যে,
চোয়াল্লিস সালে ভর্তি বিসপস্ কলেজে।
এই চোয়াল্লিস সাল থেকে সাতচল্লিশ সাল,
বিসপস্ কলেজেই পড়া তিন বছর কাল।
হিন্দু কলেজ মানে আজের প্রেসিডেন্সিতে,
পরে বিসপস্ কলেজে শিক্ষা চুকিয়ে দিতে,
সবার শেষে ব্যারেস্টার হতে বিলেত যাত্রা,
ব্যারিস্টার হয়ে এসে আরেক জীবন মাত্রা।
ব্যারিস্টার হতে যাত্রা আঠেরোশো বাষট্টি,
সাতষট্টিতে ফিরে আইনি পেশাতে গত্তি।।
কিন্তু বিলেত যাবার আগে ঘটনাক্রম এই,
আঠেরোশো তেতাল্লিশে খৃিষ্টান হতেই–
পরপর সব নিকটরা দূরে সরতে থাকে,
কয়েক বছর পরেও পিতা রাজনারায়ণ তাঁকে —
টাকা পাঠানো বন্ধ করেন, তিনি অসহায়,
খৃিষ্টান হয়ে নামের আগে ” মাইকেল ” জুড়ে যায়।
ইংরেজিতে কবি হতে খৃিষ্টান ধর্ম গ্রহন,
সেই কারণে “মাইকেল” নাম করেছিলেন বহন।
যদিওবা বিয়ের পরে ” মাইকেল ” ব্যাবহার,
পরিস্থিতি অনুযায়ী ছিল সিদ্ধান্ত তাঁর।
পুরো নাম হয় মাইকেল মধুসূদন দত্ত,
এই নামটিই মাতিয়ে ছিল, বাংলা, ভারতবর্ষ।
মাতিয়েছিল ইংল্যান্ড, প্যারিস ও ভার্সাই,
এসো এখন তাঁর সময়ের তাঁকে দেখে যাই।
[ ৩ ]
যাইহোক তা, এবার যেটা, অর্থ আর না পেতে,
পুরানো পাঠ্য বই বেচে যান মাদ্রাজ শহরেতে।
কতটা তাঁর মনের জোর স্বপ্ন পুরণ করতে,
এমন করেই জীবনকে হয় সত্যিকারের গড়তে।
বিসপস্ কলেজ, গ্রীক, ল্যাটিন, সংস্কৃত, ইংরেজী,
এইসব ভাষা শিখে ফেলে হয়ে ওঠেন তেজি।
মাদ্রাজে চাকরি করতে গিয়েও পড়ায় প্রান,
হিব্রু, ফরাসী, তামিল, তেলেগু, ইতালিয়ান, জার্মান,
একটা মাথায় এত রকম শিক্ষা, চিন্তা, কাজ,
কিকরে যে সম্ভব হয়, বুঝবে কি এ-সমাজ।
কলেজেতে পড়ার সময় নানা পত্রিকায়–
কবিতা ও নানা লেখা প্রকাশ পায় ছাপায়।
জ্ঞানান্বেষণ, Bengal Spectetor সহ অনেক,
Literary Gleamer, Calcutta Literary Gazete,
Literary Blossom কিংবা পত্রিকা Comet,
এই রকম নানা জায়গায় লিখতেন তো অনেক।
এরকম নানা পত্রিকায় লেখা বেরোয় তাঁর,
ছাত্রাবস্থা থেকেই খ্যাতি ইংরেজিতে লেখার।
আঠেরোশো সাতচল্লিশ, কলেজ শেষ করে,
আটচল্লিশ সালে গেলেন মাদ্রাজ শহরে।
“মাদ্রাজ মেইল অরফ্যান আসাইলাম স্কুল”-এ,
১৮৪৮ থেকে ৫২, পড়ান মন খুলে।
ভালো বেতন, একই সাথে শিক্ষকের পদ,
জীবনটাকে নতুন যুদ্ধে করেন অনুভব।
তারপর ওই ৫২ সালে নতুন স্থানে যান,
বাঁচার তাগিদ, এক একটা নতুন অভিযান।
মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গৃহীত হাইস্কুলে,
চাকরি নিলেন ৫৬ সাল অবধি মন খুলে।
শিক্ষকতার পাশে সাংবাদিকতা করে–
অনেক অর্থ আয় করেন দুটি কাজ ধরে,
আঠেরোশো বাষট্টি, তাতেই বিলেত পাড়ি,
তার আগে তো সাহিত্যতে নাম খ্যাতি হয় তাঁরই।
Eurasion পত্রিকা, আজ Eastern Guardian,
এর সঙ্গে আর কয়টি পত্রিকার নাম।
Madras Circulator and General Chronicle,
সাংবাদিকতার কাজে অর্থ এসেছে অঠেল,
Hindu Chronicle, ও, Hindu Patriot-য়ে,
অনেক আয় করেন সাংবাদিকতাতে।
Hindu Spectetor-এ সহ সম্পাদক হন,
তাঁর ইংরেজি পড়ে খুশি ব্রিটিশ জনগন,
মাদ্রাজ তাঁকে এনে দিল অর্থ, খ্যাতি, সব,
যারা বলে কবি হয় গরীব, তারাই তো গর্ধব।
তাদের সব শিক্ষা দীক্ষা অতি তুচ্ছ শ্রমে,
তাদেরই ধ্যান ধারনা সব এমন করেই জমে।
[ ৪ ]
যে-কথাটা বারেক বলি জ্ঞানের পথে বাঁচায়,
জ্ঞানীকে দয়ার পাত্র বলে সবাই ভরে খাঁচায়।
কবিতা লিখেই মাইকেল কেনো দরিদ্র,
অপব্যায়ের পথে অভাব করে বিদ্ধ।
মানুষ গরীব — দুর্ঘটনা বা অপব্যায়ে,
কবি হলে দরিদ্র হয় কোন যুক্তির দায়ে।
জ্ঞানের পথে বাঁচাকে ছোটো করার ধারা,
এসব ফন্দি করে, যারা ছোটলোকের চারা।
সতেরটি মৌলিক বই বাংলা, ইংরেজিতে —
আটচল্লিশ বছর জীবন, এতটা কীর্তিতে।
আঠেরোশ আটচল্লিশ ও উনপঞ্চাশ সাল,
The Captive Ladie, ও, Visions of the Past প্রকাশ কাল।
সারা দেশ পেরিয়ে খ্যাতি ইংরাজের দেশে,
চললো উড়ে হাওয়ার-হাওয়ায় মাইকেল নাম ভেসে।
[ ৫ ]
মাদ্রাজে যখন শিক্ষকতা, সাংবাদিকতা,
এই সময় দুটি বিয়ে, রেবেকা, হেনরিয়েটা।
হেনরিয়েটাকে বিয়ে করে ১৮৫৬তে,
কিছু দিন পর ফিরে আসেন কলিকাতার পথে।
পুলিস কোটে চাকরি নিলেন কলিকাতায় এসে,
সাথে দোভাষীর কাজের সাথে লেখাও চলেছে।
বহু ভাষা জানা যুবক ইংরেজিতে লিখে —
নাম যশ তো পেয়েছিলেন তখন চারিদিকে।
“দ্যা ক্যাপ্টিভ লেডি” ও “ভিসনস অব দি পাস্ট” দ্বারা —
ইংরেজিতে এনেছিলেন নতুন কাব্য ধারা,
লিখেছেন তো আরো অনেক ইংরেজী ভাষায়,
বড় ইংরেজ কবি হওয়ার জন্য খুব আশায়,
Timothy Pen poem — এই মিষ্টি ছদ্মনামে —
ইংরেজি জানা পাঠকদেরকে রোমাঞ্চ দেন প্রানে।
[ ৬ ]
তাঁর কিছু শুভার্থীরা বলেছিলেন তাঁকে —
বাংলাভাষায় লেখো যদি অতি লাভ তাতে,
ইংরেজিতে আধুনিক কবি কত জন,
শেক্সপিয়ার, মিল্টন, ওয়ার্ডওয়ার্থ, বায়রন,
তুমিও তাঁদের মাঝে হবে আরেকটি নাম,
এর ফলেও পাবে ঠিকই সবচেয়ে সেরা দাম।
তবে বাংলায় দিলে বিদেশী রূপ মিশিয়ে,
বাঙালীভাষা নতুন রূপে যাবে এগিয়ে।
সেই জন্য বাংলাভাষায় লেখা করো শুরু,
তখন হবে বাংলাভাষায় আধুনিক গুরু।
এরপরে তো যত্ন দেন বাংলাভাষার দিকে,
তারপরে তো চলতে থাকেন যত্নে বাংলা লিখে,
তারপরে তো রাতারাতি হলেন নায়ক কবি,
এসো, ঘরে টাঙিয়ে রাখি তাঁরই কোনো ছবি।
এর মধ্যে কাহিনী আগে হয়েছে কি জোড়াই,
আঠেরোশ বাষট্টিতে বিলেত থেকে ভার্সাই,
৯ই জুন বিলেতের উদ্দেশ্যেই পাড়ি,
সাথে-সাথে হয়নি তাঁর পড়া ব্যারিস্টারি।
ভার্সাই গিয়ে থেকেছেন দুটি বছর ধরে,
বাংলাভাষায় টান অনুভব করেন সে-শহরে।
সেখানে তো লিখেছেন বাংলায় প্রথম সনেট,
যে-লেখাটা ” বঙ্গভাষা ” সনেট রূপে great.
“হে বঙ্গ ভান্ডারে তব বিবিধ রতন “,
তারপরে তো সনেট লেখেন ধারাবাহিক তখন।
ইতালির রাজাকে নিয়ে ইতালি ভাষায় তাঁর —
সনেট লেখা পাঠাতে রাজা বলেন, ” চমৎকার “।
[ ৭ ]
আঠেরোশ বাষট্টিতে ব্যারিস্টারি পড়তে —
ইংল্যান্ড গেলেও দেরি হয় স্বপ্ন পুরন করতে।
পঁয়ষট্টি সাল, ভার্সাই থেকে ফিরে লন্ডনে —-
ব্যারিস্টারি পড়তে ভর্তি হলেন গ্রেজ-ইন এ,
ছেষট্টি সালে ব্যারিস্টারি পাসের পরে —
৫ ই জানুয়ারী সাতষট্টি — ঘরের ছেলে ঘরে,
এবার কাজ শুরু করেন ব্যারিস্টার রূপে —
নতুন আশা আর আবেগে কলিকাতা হাইকোটে।
আইনবিদের কাজে এসে জমেনি যেই পসার,
আর দেরি না করে পথ বদলানো দরকার,
আঠেরোশো সত্তরে কোটেই নেন চাকরি,
ব্যারিস্টার মুকুট ছেড়ে অনুবাদকের পাগড়ি।
বেতন মাসে হাজার টাকা, সে-যুগে রাজ বেতন,
তবু ব্যারিস্টারির পদ ভুলা কি যায় কখোন?
দুই বছর অনুবাদের চাকরি করার পরে,
আবার ব্যারিস্টারি শুরু নিজের মতো করে।
এবার পসার জমে ওঠে ব্যারিস্টারি কাজে,
মান সম্মান জমিয়ে ফেলেন বন্ধুদিগের মাঝে।
কিন্তু অতি ব্যায়ের জন্য হারালেন সম্পদ,
দুশ্চিন্তা, অকাল জ্বরায় এলো নানা রোগ।
এই লোকটি অর্থাভাবে কিভাবে হন শেষ,
সকল বন্ধু রাতারাতি তখন নিরুদ্দেশ।
বিদ্যাসাগর করেছিলেন অনেক সহায়তা,
পরে বিদ্যেসাগরেরও আসে অক্ষমতা।
উত্তরপাড়ায় জমিদারদের লাইব্রেরীর ঘরে,
বিশ্বের এক রাজা কাটান আধাহার, অনাদরে।
[ ৮ ]
মাইকেলের জনপ্রিয়তা ছিল কত দূর,
প্রতি জায়গায় যেভাবে পৌঁছোয় রোদ্দুর।
নিজের মতো হেঁটে-হেঁটে চলেছিলেন পথে,
হঠাৎ করে দাঁড়ান কিছু শব্দের চমকে।
একটা দোকান থেকে আসে এমন কিছু পাঠ,
শব্দগুলি হাওয়ায় ভেসে করছে বাজিমাৎ।
মনে হোলো শব্দগুলি তার কাছে খুব চেনা,
এখানটাতে এসব শব্দ কেউ তো বলবে না।
নীরালা সেই পথের পাসে বিরল অনুভূতি,
তিনি এসে দাঁড়িয়ে পড়েন সেথায় চুপিচুপি।
সেই দোকানের দোকানদার সামনে বই রেখে —
পাঠ করছে সেটা থেকে রসের সাথে চেখে।
কিছুক্ষন শোনার পরে কবি রোমাঞ্চিত,
প্রশ্ন করেন দোকানিকে বাক্য পরিমিত :–
আচ্ছা বাবু, কার বইটা পড়েন এমন করে?
এবার দোকানদার মুখটা তুলে বিনয় ধরে—
উত্তর দেয়, ” বাবু এটা মেঘনাদ বধ কাব্য,
এই বইকে টপকে যাবে কার বা আছে সাধ্য!
এ বই মাইকেল মধুসূদন দত্তের রচনা,
তাঁর নামটা শোনেনি, দেশে আছে কয়জনা?”
মাইকেল তো এই উত্তর শুনে অবাক হন,
তাঁকে নিয়ে অজ গাঁয়েতেও এত জাগরণ।
তাঁর দুচোখ গেলো ভিজে এই সম্মান পাওয়ায়,
দোকান থেকে বেরিয়ে আবার হাঁটতে থাকেন হাওয়ায়।
ভেবে দেখো যে-যুগ ছিল অতি অল্প শিক্ষা,
সেই যুগেতে মানুষেতে ছিল কত নিষ্ঠা,
তাদের মেধা, তাদের চিন্তা কতটা উন্নত,
আমাদের এই যুগে কে বা আছে তাদের মতো।
সেই যুগের মানুষ, ঘর, পথঘাট, নিয়ে ভাবো,
অপূর্ব এক গভীরতায় নতুন হয়ে জাগো।
[ ৯ ]
ফ্রান্সে যেথায় ছিলেন, সেথায় আছে তাঁরই স্মৃতি,
এই রকম কতো স্থানে আছেন এই কৃতি।
বেনিয়াপুকুর, কলকাতায়, আছে তাঁর সমাধি,
চলো সেখানটাতে গিয়ে আমরা একটু কাঁদি।
এই যে এত আধুনিক সব সাহিত্য ছেয়ে,
আধুনিক সব অনুভূতি আমরা যাই পেয়ে,
এসব কিছুর নেতৃত্বে এই দত্ত কবি,
আমাদেরই ভিতর হারায় তাঁরই মুখের ছবি!
বাংলাদেশের যশোর জেলায় সাগর দাঁড়িতে,
এম-পি, মন্ত্রী, সবাই এসে এই জায়গাটিতে —
মহাকবি মাইকেলের স্মৃতি পালন করেন,
তাঁর কাজ ও জীবনটাকে তাঁরা তুলে ধরেন।
মাইকেলের জন্ম দিবস ভারতে বাংলায়,
বা, যদি রাষ্ট্রিয়ভাবে পালন করা যায় —
তবেই দেশের মাঝে হোতো অনেক অনুভূতি,
ভালো কাজ করতে চাই — ভালোয় হবো সুখি।
বিদেশী ভাষা শিখে আবার সেই ভাষারই দ্বারা —
সাহিত্যতে সম্ভব হয় সফল হতে পারা,
সেই পথটা প্রথম দেখান মাইকেল দত্ত কবি,
তাঁকেই আমরা জানিনা ঠিক, এই আমাদের ছবি।
কবি মানে অগোছালো পোশাক আসাক নয়,
পোষাক, অভিব্যক্তিতে নায়ক যেন হয়।
সেই যুগে সব কিছুতে তিনি এতো আগিয়ে,
কবি কেমন হবে তিনি দিলেন সাজিয়ে।
এত রকম পূর্ণতাতেই কবি হবার শর্ত,
তিনিই প্রথম শুধু মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
[ ১০ ]
বারোটি বাংলা আর পাঁচটি ইংরেজীতে বই,
এদের নিয়ে এখন কিছু কথা খুলে কই।
অনুবাদের গ্রন্থগুলো এদের বাইরে ধরা,
কাজগুলো তাঁর শুনলে হবে দুচোখ ছ্যানাবড়া।
রচনার ধারায় কতো একমুখিতা, নিষ্ঠা,
আঠেরোশো উনষাটে নাটক শর্মিষ্ঠা।
আঠেরোশো ষাটে ” একেই কি বলে সভ্যতা”,
এই বছরেই ” বুড়ো সালিকের ঘাড়ে রোঁ ” লেখা।
এই বছরেই ” পদ্মাবতী নাটক ” লিখে চমক,
একষট্টি সালে লেখেন ” কৃষ্ণকুমারী ” নাটক।
আঠারোশ চোয়াত্তরে বেরোয় “মায়া কানন”,
এইগুলি সব বাংলা নাটক, মৌলিক রচন।
বাংলা কাব্য তালিকাটা দিচ্ছি এবার হাতে,
“তিলোক্তমা সম্ভব কাব্য’, আঠেরোশো ষাটে।
আঠারোশো একষট্টিতে “ব্রজাঙ্গনা কাব্য”,
এই বছরেই বীরাঙ্গনা কাব্য, বিরল সাধ্য।
কারণ, এই আঠেরোশো একষট্টি সালে —
“মেঘনাদ বধ কাব্য ” মহাকাব্য লেখা সমকালে।
এই বছরেই লিখেছিলেন ” পদ্মাবতী নাটক “।
আঠেরোশ একাত্তরে লেখেন ” হেক্টর বধ “।
“হেক্টর বধ” কাব্য ইংরেজি থেকে বাংলায়,
এটার অনুবাদটা ছিল অপূর্ব দক্ষতায়।
আঠেরোশো ছেষট্টিতে সনেটের অঞ্জলি,
বইটির নাম ” চতুর্দশপদী কবিতাবলী “।
[ ১১ ]
একটা কথা বোকার মতো বলেন অনেক লোক,
কাব্য নিয়ে অনুভূতির নেই তো যাঁদের চোখ।
চতুর্দশপদীকে দেখে সনেট বলেন তাঁরা,
আসলে তা নয়, সনেট হলো পৃথক একটি ধারা।
প্রাথমিক শর্ত হবে চৌদ্দ লাইন বটে,
অন্তমিল ও ভিন্ন গতি সনেট গঠন পথে।
সেইগুলি না জেনে তাঁরা শিক্ষিত, বিদ্দ,
কোনো জ্ঞানেই হননি তাঁরা সঠিক করে সিদ্ধ।
অনেকে তো বলেন শুনি — অমিত্রাক্ষর সনেট,
সনেট হয়না অমিত্রাক্ষর, হায়রে, জানেনা অনেক।
পেত্রার্কীয়, সেক্সপিরিয়, আরো কত রকম,
সনেট আছে ভিন্ন রকম অন্তমিলে যখন —
সেইসব না পড়ে, বুঝে, আবছা জ্ঞানের বোল,
এভাবে কি রাষ্ট্র এগোয়, চোখে আসে জল।
মানব জীবন কী দুর্লভ, রোমাঞ্চকর জন্ম,
অজ্ঞানে আর অর্ধ জ্ঞানে, কী করে হয় ধন্য!
মাইকেলের ইংরেজি রচনা বলছি গুছিয়ে,
Collected Poems বেরোয় অনেক কবিতা নিয়ে।
The Apsari: A story from Hindu Mithology,
The visions of the past, ও, The captive ladie.
Rijia, Impress of Inde, ছিল কাব্য নাট্য,
একই সাথে আরো ইংরেজীর রচনার সাক্ষ্য।
অনুবাদ, রামনারায়ন তর্করত্নের ” রন্তাবলী”,
দীনবন্ধু মিত্রর নীল দর্পণ, বিদ্রোহে সব জ্বলি,
সেই যুগে সাহস নিয়ে এর অনুবাদ করা,
কতখানি সাহসী মন, যায় কি মাপে ধরা?
” নীল দর্পণ ” এর অনুবাদ কতো রোমাঞ্চকর,
অনুবাদ নাম, The Indigo Planting Mirror.
The synopsis of the Rukshini Haran Natok,
এই রকম আরো অনেক দুর্লভ কাজ সব।
প্রবন্ধ সাহিত্যও আছে, চিন্তায় মহা সিন্ধু,
গ্রন্থগুলি যথা Anglo Saxion and The Hindu.
On Poetry Eccetra, এবং, An Essey,
এসব লেখার পরে গেলেন অন্ধকারের দেশে।
শেষ বইটা ছিল তাঁর নাটক ” মায়া কানন “,
আঠেরোশো তিয়াত্তর সালে এটার লেখন।
এই বছরেই ৯-ই জুন, উনপঞ্চাশে শেষ ঘুম,
এসো দিই এ-রাজপুত্রের ঘুম কপালে চুম।
শুয়ে আছেন কী সুন্দর, কান্না, হাসি, আগুন।
———————————————
——————————————–
Excuses : 🥇☕
এই সময়ে মাইকেল মধুসূদন দত্তকে, নতুন করে সংক্ষেপে উপলব্ধি করার জন্য তাঁকে নিয়ে এই দীর্ঘ জীবনী কবিতা লিখলাম। তাঁর সম্বন্ধে অতি সংক্ষিপ্ত জ্ঞান চারদিকে ছড়িয়ে। এই কবিতাটি পড়ে অল্প সময়ে কবিতার স্বাদে তাঁকে জানা হবে। তাঁকে নিয়ে নতুন স্বাদে অনুভব করতেও ভালোলাগবে। তাঁর প্রসারিত যোগ্যতা নিয়েও মানুষের মনে অনেক তথ্য স্মৃতিতে ধরে রাখতে এই কবিতা সহায়ক হবে আশা করি।
কোথাও কোনো সাল বা নাম ভুল থাকলে সেটা মার্জনীয়। হয় তো সেটা নাও হতে পারে, হলে যৎ সামান্য হতে পারে। অনেক নিখুঁত করে কাজটা করার চেষ্টা করেছি। কারণ, এই জাতিয় কাজে এইরকম কিছু ত্রুটি হতে পারে, হাতে পাওয়া তথ্যের কারণে। যেমন কোথাও পেয়েছি ১৮৬৬ সালে চতুর্দশপদী কবিতাবলী বেরোয়। কোথাও লেখা ১৮৬৪ সাল। কোথাও লেখা ১৮৪৮ সালে The captive ladie প্রকাশ। কোথাও আছে ১৮৪৯। হতে পারে, লেখাটা ১৮৪৮ সালে, প্রকাশ ১৮৪৯ সালে। কিন্তু সেটা নিখুঁত করে না বলে গড়ে কোথাও বলেছে ১৮৪৮ সালে প্রকাশ, কোথাও বলেছে ১৮৪৯ সাল। এইরকম দু এক জায়গায় তথ্য বিঘ্নিত হতে পারে। সেটা পাঠ্যক্রম বা পাঠক বুঝে নেবেন। বা সেটা বদল করে দেওয়া হবে পরে কোথাও মুদ্রনে আরো Authentic তথ্য পেলে। আসল জিনিস হোলো কবিতার Quality ঠিক আছে কিনা দেখুন। সেটা হলেই আমার এত শ্রম সার্থক। আবার, চিত্রকল্প
পড়তে ভালোবাসেন বা সম ধরনের কবিতা পড়তে চান, এমন ধরনের পাঠক-পাঠিকাদের ক্ষেত্রে বলি যে, এখানে চিত্রকল্প দিয়ে লেখার কিছু সুযোগ নেই। কারণ, এটা ইতিহাস আশ্রিত জীবনী মূলক কাহিনী কবিতা। এর মাঝে কিছু appealing beauty of depth দিয়েছি। এর বাইরে আর কিছু করা গেলো না। এর মধ্যেও কিছু দূরুহ চিত্রকল্প মেশাতে পারতাম হয় তো, কিন্তু তার ফলে এর সরলতার মাধুর্য কমে যেত।
— ঋদেনদিক মিত্রো
———————————————–
———————————————-
Excellent writing ..so many things of Dutta is still unknown to the people ..So , its a good gesture to give the justices to a great poet , Michael Madhusudan Dutta.
The style of writing is very nice and poem quality is very rich.
Hats off to poet Hridendik Mitra